২৯ মার্চ শনিবার  বিকেলে গলাচিপা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গণঅধিকার পরিষদ গলাচিপা উপজেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিল ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর।

গণ অধিকার পরিষদ গলাচিপা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, পটুয়াখালী জেলা গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক সৈয়দ নজরুল ইসলাম লিটন ও সদস্য  সচিব মো. শাহ আলম।

আরো উপস্থিত ছিলেন, গণ অধিকার পরিষদ গলাচিপা উপজেলা শাখার সদস্য সচিব মো. জাকির হোসেন মুন্সি, পটুয়াখালী জেলা যুব অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি মহিবুল্লাহ এনিম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আবু নাঈম প্রমুখ।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপজেলা গণ অধিকার, যুব অধিকার, শ্রমিক অধিকার ও ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথি'র বক্তব্যে নুর বলেন, "আমরা যে আদর্শিক ছাত্র ও তরুণ প্রজন্মকে আন্দোলনের মধ্যে দেখেছি, এখন তাদের অনেকের মধ্যেই সুবিধাবাদী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় ইউএনও অফিস, ডিসি অফিস, এসপি অফিস ও থানায় তাদের অনৈতিক আধিপত্য বিস্তার এবং প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগের প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।"

তিনি বলেন, "যেহেতু আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক দল গঠন করেছে, এখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম আর নেই। এটি সকল মতাদর্শের মানুষের একটি প্ল্যাটফর্ম ছিল। এখন সবাই যার যার রাজনৈতিক প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছে।"

তিনি আরও বলেন, "গত জুলাইয়ের আন্দোলনে ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আন্দোলন করে যা পারেনি ছাত্র, জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে, কিন্তু জনগণের কাঙ্ক্ষিত মুক্তি এখনও আসেনি। যে কোনো গণআন্দোলন তখনই সফল হয়, যখন জনগণ সরাসরি সম্পৃক্ত হয়। এখন রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব জনগণের ত্যাগের প্রতিদান দেওয়া। যদি তারা জনগণের প্রত্যাশা ভুলে যায়, তবে জনগণ প্রতারিত হবে এবং রাজনৈতিক নেতারাও তার ভুক্তভোগী হবে।"

নুরুল হক নুর বলেন, "মেধাবী তরুণরা রাজনীতির বাইরে থাকায় দুর্বৃত্তরা রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে। এই চিত্র আমরা গত কয়েক বছর ধরে দেখেছি। তাই মেধাবী তরুণদের রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে হবে। যদি ছাত্র নেতারা সরকারের মধ্যে না থেকে পদত্যাগ করে রাজনৈতিক দলের মতো রাজপথে আন্দোলন, সংগ্রাম চালিয়ে যান, তাহলে ভবিষ্যতে জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।"

নুর বলেন, "কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে আমরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে গেছি। ২০১৮ সালের ঐতিহাসিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সারাদেশে ছাত্রদের মধ্যে একটি প্রতিবাদের চেতনা ও দ্রোহের আগুন আমরা জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম। সেই আগুনের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সম্ভব হয়েছে।"

তিনি বলেন,  "প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও সরকার আমরা কেউ কারো মুখাপেক্ষী নয়। বরং আমরা সবামিলে সমন্বিত প্রক্রিয়া ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে কাজ করতে পারি তবেই আমরা গণ অভ্যুন্থানের সফলতা এবং সুফল আমাদের জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়ে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মান করতে পারবো।"

তিনি আরও বলেন, "আশাকরি এ বছরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এরপরে স্থানীয় নির্বাচন হবে। আমি পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা ও সমর্থন পেলে সংসদে গিয়ে আপনাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলবো।"

তিনি উল্লেখ করেন, "গলাচিপার রামনাবাদ নদীর ব্রিজ বাতিল হয়ে যাচ্ছিল, যা উপদেষ্টাদের কাছে ঘুরে, মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় গিয়ে পুনরায় টেন্ডার করানো হয়েছে। আশা করি কাজ দ্রুত শুরু হবে।"

ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে উপজেলার প্রায় ৩ হাজার মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়।