জনপ্রিয় ইসলামিক আলোচক ড. মিজানুর রহমান আজহারী শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ময়মনসিংহে প্রধান বক্তা হিসেবে মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন। এ উপলক্ষে নগরীর ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ ময়দানে রাতেই মানুষের ঢল নেমেছে।

শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে সরেজমিনে দেখা যায়, ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা একে একে মাহফিলের ময়দানে আসছেন। অনেকে ময়মনসিংহ বিভাগ ছাড়াও বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে এসেছেন। কেউ একা, কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, কেউ বন্ধুদের নিয়ে, আবার কেউ পরিচিতজনদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। কম্বলসহ মাফলার, সোয়েটার, চাদর নিয়ে এসেছেন তারা। শেরপুরের নকলা থেকে এসেছেন আশরাফুল আলম। তিনি  বলেন, আমার পছন্দের হুজুর মিজানুর রহমান আজহারী। তার অসংখ্য ওয়াজ ইউটিউবে শুনেছি। সকালে এলে মঞ্চের কাছাকাছি স্থানে জায়গা পাওয়া সম্ভব না। তাই এবার সরাসরি দেখতে বিকেলেই চলে এসেছি।

জামালপুর সদর থেকে এসেছেন মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, মধুর কণ্ঠে বয়ান করেন
আজহারী হুজুর। তাকে সরাসরি দেখে বয়ান কখনো শুনতে পারিনি। খুব ইচ্ছে তাকে সরাসরি দেখে বয়ান শোনার। সম্প্রতি ঢাকার নবাবগঞ্জে হুজুর বয়ান করবে জানতে পেরে সেখানেই যেতে চেয়েছিলাম। তবে আগের দিন বাসায় একটি সমস্যা তৈরি হওয়ায় যেতে পারিনি। হুজুরকে দেখে বয়ান শোনার ইচ্ছে ময়মনসিংহে আর মিস করতে চাই না। তাই রাতে মাঠে চলে এসেছি। এই বিষয়ে জানতে চাইলে,

আয়োজকরা জানিয়েছেন, মাহফিল উপলক্ষে ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখের অধিক মানুষের সমাগম ঘটতে পারে। এজন্য সার্কিট হাউজ মাঠ, জেলা স্কুল মাঠ, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল মাঠ, উমেদ আলী মাঠসহ লেডিস ক্লাব মাঠ প্রস্তুত করা হয়েছে। শুধু নারীদের জন্য জেলা স্কুল বর্ডিং মাঠ প্রস্তত রয়েছে। এই মাঠগুলোতে এলইডির মাধ্যমে বয়ান প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের জন্য রয়েছে জেনারেটর। পাশাপাশি ফ্রি ওয়াইফাই, স্যানিটেশন, পর্যাপ্ত সুপেয় পানি, চার শতাধিক অজুখানার ব্যবস্থা, ইন্টারনেট সচল রাখার জন্য বাংলালিংক টাওয়ার, রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল, সমাগম কেন্দ্র করে রয়েছে তিনটি মেডিক্যাল ক্যাম্প। আল ইসলাম ট্রাস্টের আয়োজনে অনুষ্ঠিতব্য তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে সভাপতিত্ব করবেন শায়খুল হাদিস হাফেজ মাওলানা নুরুল ইসলাম। 
এবার ময়মনসিংহে আজহারীর মাহফিলের জন্য  ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। 
তিনি বলেন, কোরআন মেনে চললে সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। তিনি আরও বলেন,  আজহারী
মাহফিলে বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিতির কারণে এদিন শহরে যানবাহন চলাচলেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকবে। শম্ভুগঞ্জ ব্রিজের আগেই বড় যানবাহনকে আটকে দেওয়া হবে। এছাড়া নগরীর মাসকান্দা, আকুয়া বাইপাস ও রহমতপুর বাইপাসে আটকে দেওয়া হবে বড় যানবাহন। তবে শহরের অবস্থা অনুযায়ী ইজিবাইক (অটো) চলাচল করবে। এদিন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ময়মনসিংহে। সেক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য শহরে চলাচলে কোনো বাধা থাকবে না। তবে মূল শহরে যানজটের আশঙ্কায় সবাইকে বাইপাস ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক কামরুল হাসান মিলন জাগো নিউজকে বলেন, ড. মিজানুর রহমান আজহারী একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি। তাকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পছন্দ করেন। বয়ান শুনতে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। এরই মধ্যে দেখতে পাচ্ছি মানুষের ঢল নেমেছে। ওয়াজ শুরুর আগ পর্যন্ত সময়ে নিশ্চয়ই সমাগম আরও বহুগুণ বাড়বে। আয়োজনের সব ধরনের প্রস্তুতি শুক্রবার বিকেলেই শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, মিজানুর রহমান আজহারী বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ। যেহেতু লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত থাকবেন, সেহেতু মানুষের কিছু অসুবিধা হতে পারে। ইসলামের স্বার্থে নগরবাসী এই অসুবিধা মেনে নেবেন বলে আশা করছি।

আল ইসলাম ট্রাস্টের সদস্য মাহবুব রশিদ ফরাজি বলেন, মাহফিলে যেন মানুষ আসে, সেজন্য যথেষ্ট প্রচার চালানো হয়েছে। এটি ময়মনসিংহের বিভাগীয় মাহফিল। তবে অনেকে বিভাগের বাইরে থেকেও আসছেন।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, মাহফিলে কোনো অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার আশঙ্কা নেই। তবুও অগণিত মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।

দেশে ফেরার পর গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারের পেকুয়ায় মিজানুর রহমান আজহারীর প্রথম তাফসির মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে তার আগমনের খবরে মানুষের ঢল নামে। পরে কক্সবাজার, যশোর, লালমনিরহাট, সিলেট, চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী ও ঢাকার নবাবগঞ্জে তাফসির মাহফিলে অংশ নেন মিজানুর রহমান আজহারী। ময়মনসিংহে এটি আজহারীর অষ্টম মাহফিল।