মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌরসভার চাল বাজারের জরাজীর্ণ ভবনটি যে কোন মুহূর্তে ধ্বসে পড়ে ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির আশংকায় শ্রীমঙ্গল পৌরসভা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে গেল সাড়ে ৪ বছর ধরে চিঠি চালাচালি হলেও এ নিয়ে কোন সুরহা হয়নি। এতে করে যে কোন মুহূর্তে ভবনটি ধ্বসে ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, প্রায় ৪ দশক পূর্বে নির্মিত শ্রীমঙ্গল পৌরসভার চাল বাজারটি ছাদ, কলাম, বীমসহ ভবনের বিভিন্ন অংশে ছোট বড় অসংখ্য ফাঁটল দেখা দিয়েছে। ছাদের বেশীরভাগ অংশের আস্তরণ খুলে রড বেড়িয়ে এসেছে। ছাদ থেকে আস্তরণ খুলে ব্যবসায়ী ও খরিদ্দারের মাথায় পড়ে এরিমধ্যে অনেকে আহত হয়েছেন। বৃষ্টির সময় ছাদ চুঁয়ে পানি পড়ায় ব্যবসায়ীরা দোকান গুটিয়ে রাখতে বাধ্য হন। ভবনটির ছাদের নীচে শতাধিক চাল, ডিম, আলু, চিঁড়া-মুড়ি ব্যবসায়ীরা এখন ভীতির মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এখান কার ডিম ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, ‘ভাঙ্গা ভবনের নীচে আমরা ঝুকির মধ্যে আছি’। আলু ব্যবসায়ী মো. দেলওয়ার হোসেন বলেন, ‘ভাঙ্গা ছাদের নীচে আতংকের মধ্যেই আমরা আছি। যাবার কোন জায়গাও নেই।
তাই ঝুকি নিয়ে হলেও বাধ্য হয়ে এখানে ব্যবসা করছি’। চাল বাজার, ডিম বাজার, মুড়ি বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল জলিল ভবন ধ্বসে পড়ার আশংকা করে ভবনটি দ্রুত সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন। চাল বাজারের শাহজালাল ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী হাজী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ভবনজুড়ে ফাঁটঁল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির দিনে ছাঁদ দিয়ে পানি পড়ে, আবার নীচ থেকেও পানি উঠে। অনেক জায়গায় বড় বড় ফাঁটল দেখা যাচ্ছে। ছাদের আস্তরণ খুলে পড়ছে। তিনি বলেন বিল্ডিংটি অনেক পুরোনো। যে কারনে ভবনটি ধ্বসে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তিনি ভবনটি ভেঙ্গে নতুন করে আধুনিক ভবন নির্মানে কর্র্তৃপক্ষের প্রতি আবেদন জানান’। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়ায় দুর্ঘটনার আশংকায় ২০১৮ সালে পৌরসভার মাসিক এক সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক নতুন বাজার ও পুরান বাজারে পৌরসভার নিজস্ব ভুমিতে দ্বিতল ভবন নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে নতুন করে ভবন নির্মানে অনুমোদনের জন্য গত ২০১৮ সালের ১২ মার্চ শ্রীমঙ্গল পৌরসভা থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দেয়া হয়।
এরপর একই বছরের ১৮ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. আব্দুর রউফ মিয়া মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি পত্র দিয়ে মার্কেট নির্মাণ ও প্রস্তাবিত ভুমির মালিকানা এবং শ্রেণী বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনা পেয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক মো. রোকন উদ্দিন ৬মে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দিয়ে পৌরসভার নতুন বাজার ও পুরান বাজারে পৌরসভার নিজন্ব ভুমিতে দ্বিতল মার্কেট নির্মাণ ও প্রস্তাবিত ভুমির মালিকানা/শ্রেণীর বিষয়ে তদন্তক্রমে প্রতিবেদন আকারে মতামত দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। শ্রীমঙ্গল পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো চিঠির পর এপর্যন্ত এ নিয়ে আর কোন উদ্যোগ নেয়ার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর গত ১৯ আগষ্ট শ্রীমঙ্গল পৌরসভা থেকে ভুমির তফশীল উল্লেখ করে মার্কেট এর সেলামীর অর্থ দিয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করার কথা জানিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে আবারো চিঠি দেয়া হয়। এ চিঠিতে পৌরসভার রাজস্ব বৃদ্ধিসহ জানমালের ক্ষতিসাধন থেকে মানুষকে রক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম জানান, ‘ভবনটি প্রায় চল্লিশ বছর আগে নির্মাণ করা হয়।
ভবনটির বর্তমান বেহাল দশায় পৌরসভা কর্তৃক ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ভবন ভেঙ্গে নতুন করে দ্বিতল আধুনিক ভবন নির্মানে প্রশাসনিক অনুমোদন চেয়ে দুই দফা স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ভবন ভাঙ্গা ও প্রস্তাবিত নতুন ভবন নির্মানে প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া যায়নি। ভবনের ঝুঁকি বিবেচনায় পদক্ষেপ গ্রহনে সর্বশেষ গত ৪ এপ্রিল শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র কর্তৃক স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মহোদয়কে এ বিষয়ে আরো একটি পত্র পাঠানো হয়েছে’ বলে তিনি জানান। জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে আমি অবগত না। তবে কোন নির্দেশনা পেলে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে’। শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মহসিন মিয়া মধু বলেন, ‘ জরাজীর্ণ ভবনটিতে অনেক ঝুকি নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে আসছেন। সেখানকার ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও পৌরসভার আয় বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে পৌরসভা কর্তৃক সেখানে আধুনিক দ্বিতল ভবন নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে আমরা প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছি। আশা করছি স্থানীয় সরকার বিভাগ দ্রুত এ বিষযে পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।