এছাড়া এখানে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার, হৃদরোগসহ কিছু জটিল অসংক্রামক রোগের চুড়ান্ত পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য চিকিৎসাসেবা নেই। রংপুরের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে রয়েছে মানের ঘাটতি, আস্থার সংকট, প্রতারণার ফাঁদ। বিভিন্ন তথ্য ও সূত্র বলছে, নানা কারণে ভালো চিকিৎসা সেবার আশায় রংপুরের মধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষও ছুটছে ঢাকাসহ পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীই ক্যান্সার, কিডনি, হার্ট ও লিভার জটিলতার। এতে করে প্রতিবছর রংপুরের বাইরে চলে যাচ্ছে শত কোটি টাকা। আর শত সমস্যার মাঝেও গরিব ও অসহায় মানুষের চিকিৎসার শেষ আশ্রয়স্থল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সরেজমিনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার অধিকাংশ যন্ত্রপাতি রয়েছে বিকল অবস্থায়। ভেতরের পরিবেশ নোংরা ও বাজে। বিভিন্ন বিভাগের সামনে ডাক্তার দেখাতে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে রোগীরা। মেডিসিন বিভাগের সামনে নীলফামারী থেকে আসা নকুল সাহার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন বুকে ব্যাথায় ভুগছি। নীলফামারিতে ডাক্তার দেখিয়েছি, কাজ হয়নি। রংপুরে আসছি গতকাল এখন ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছি। এখানকার পরিবেশ খুব বাজে। একই চিত্র অর্থো-সার্জারি বিভাগেও। শয্যায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন অনেক রোগী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী বলেন, দুর্ঘটনায় পায়ের হাড় ভেঙে গিয়েছে।
২ মাস ধরে পরে আছি কোনও উন্নতি নেই। শুধু পরীক্ষা করছি আর ঔষধ খেয়ে যাচ্ছি। ডাক্তারকে বলেছি রিলিজ দিতে ঢাকা চলে যাবো। রোগীর এমন অভিযোগের সূত্র ধরে কথা হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থো-সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান সুজন বলেন, হাড়ে আঘাত পেলে বা ভেঙে গেলে ঠিক হতে সময়তো একটু লাগবেই। রোগীরা মনে করেন ডাক্তাররা ইচ্ছে করে এসব করেন এটা ভূল ধারণা। আমরা সবসময় চেষ্টা করি রোগীকে সঠিক ও মানসম্মত সেবা প্রদানের। তবুও রোগীরা কেনও ঢাকা ও ভারত যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে রংপুরের সিনিয়র সাংবাদিক এটিএন বাংলা এবং এটিএন নিউজের রংপুর প্রতিনিধি মাহবুবুল ইসলাম তার সংবাদ সংগ্রহের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, রংপুরেও অনেক ভালো মানের চিকিৎসাসেবা আছে। কিন্তু নানা কারণে মানুষের আস্থা নেই।
সবসময় রোগীরা একটা কথাই বলে, রংপুরে চিকিৎসার খরচও বেশি, আর দুর্ভোগের শিকারও হতে হয় বেশি। সরকারি ও বেসরকারিভাবে চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো রোগীদের সার্বিক দিকে নজর রাখলে ঢাকা কিংবা ভারত যাওয়ার প্রবণতা কমে যাবে এ অঞ্চলের রোগীদের। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নানাদিক নিয়ে আলোচনা হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ শরীফুল হাসান এ প্রতিবেদককে জানান, রংপুর মেডিকেল থেকে ধীরে ধীরে অব্যবস্থাপনা, দালালদের দৌরাত্মসহ সবকিছুই সরে যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ঢেলে সাজানোর। এখানে সবি আছে। সেবা নিতে কেউ হয়রানির শিকার হয়েছে এমন অভিযোগ পেলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।