ফুটপাতজুড়ে কাপড়, জুতা, ব্যাগ, খেলনা, খাবারসহ নানা পণ্যের পসরা সাজানো। শুধু এই কয়েকটি জায়গা নয়, রাজধানীর আরও অনেক অলিগলি, মোড় ও বাজার-সংলগ্ন ফুটপাতেও দেখা যায় একই চিত্র। সেসব এলাকায় যাতায়াতের পথে একবার চোখ পড়লেই বোঝা যায়—ফুটপাতগুলো আর হাঁটার স্থান নেই, সেগুলো যেন পুরোপুরি চলে গেছে দোকানদারদের নিয়ন্ত্রণে। যে স্থান পথচারীদের নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য বানানো, সেই ফুটপাতেই এখন হাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিদিনকার এক কঠিন চ্যালেঞ্জ।
ব্যস্ত সময়ে ফুটপাতে চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ধাক্কা, ভিড়ের চাপে হোঁচট, এমনকি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ফুটপাত মূলত তৈরি হয়েছিল মানুষ হেঁটে চলার জন্য। কিন্তু এখন সেই হাঁটার জায়গাতেই গড়ে উঠেছে নানা রকম অস্থায়ী ব্যবসা। কেউ সাজিয়েছেন সাজসরঞ্জামের পসরা, কেউ বিক্রি করছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, আবার কেউ সামনে রেখেছেন চায়ের কেটলি আর শুকনো খাবার। কেউ বসে আছেন প্লাস্টিকের চেয়ারে, কেউবা ছোট কাঠের টেবিল বিছিয়ে মালপত্র গুছিয়ে বসে আছেন। এতে পথচারীরা চলার সময় বাধা পেয়ে বাধ্য হচ্ছেন রাস্তায় নেমে হাঁটতে। আর তাতেই বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি, তৈরি হচ্ছে যানজট।
শুধু ক্ষণিকের হকারই নয়, অনেক জায়গায় চোখে পড়ে ইট-সিমেন্টে গাঁথা স্থায়ী দোকান। কেউ কেউ বিদ্যুৎ সংযোগও নিয়ে বসেছেন। এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য মাঝে মাঝে ‘অভিযান’ হয়, সংবাদ হয়, ছবি হয়—কিন্তু দিন না পেরোতেই আবারও সেই পুরোনো চিত্র।
প্রশ্ন জাগে—এই শহরের উন্নয়ন ও সুশৃঙ্খলতা বজায় রাখার দায়িত্বে থাকা সরকার কি তাদের দায়িত্ব থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে? পরিকল্পিত নগর গড়ার প্রতিশ্রুতি কি শুধু ভোটের মাঠেই থাকবে? সরকার আসে, সরকার যায়, কিন্তু কাজের কাজ খুব কমই হয়। নাগরিকদের নিরাপদ চলাচল ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য কি কখনো সৎ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে?
অন্যদিকে, হকারদের জীবন বাস্তবতাও অস্বীকার করা যায় না। কেউ পেটের দায়ে, কেউ নিঃস্ব হয়ে রাস্তায় নেমেছেন। কিন্তু তাই বলে কি শহরটা বেহাল থাকবে? এমন কোনো সমাধান কি নেই, যাতে হকারদের বিক্রির সুযোগও থাকে, আবার পথচারীর চলাচলেও বিঘ্ন না ঘটে?
ভবিষ্যতের শহর গড়তে হলে এখনই চাই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। কোথায় থাকবে হকার, আর কোথায় চলবে মানুষ—এটি স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতেই হবে। নয়তো ফুটপাত শুধু পায়ের নিচে থাকবে ঠিকই, কিন্তু নিরাপদ চলার পথ হিসেবে আর থাকবে না।