রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার কৃষক মোঃ কামরুজ্জামান খান ও মতিয়ার রহমান পেঁয়াজের বীজ (দানা) উৎপাদন করে তারা হয়ে উঠেছেন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। ইউটিউব চ্যানেল ও স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের অনুপ্রেরণায় মাত্র চার বছরের মধ্যে তারা পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
সামাজিক পরিস্থিতি আর স্বচ্ছল জীবন সংসারে বেড়ে ওঠা কামরুজ্জামান খান ও মোঃ মতিয়ার রহমান প্রতিষ্ঠানিক পড়াশোনা অনেকটাই করেছেন তারা। সেই সাথে বাবার কৃষি কাজে সহযোগিতা করতে গিয়েই তারা পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ২০২১ সাল থেকে তারা পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। এখন প্রতি বছর লক্ষাধিক টাকার বীজ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
কামরুজ্জামান খান ও মতিয়ার রহমানের প্রচেষ্টায় তার গ্রামে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। একসময় যারা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইতেন না, এখন তার কাছ থেকেই পরামর্শ নিচ্ছেন। এলাকায় তারা সফল৷ভাবে পেঁয়াজের বীজ (দানা) উৎপাদন করে ‘পেঁয়াজ কামরুজ্জামান ও মতিয়ার’ নামে পরিচিত হয়েছেন।
এ বছর মোঃ কামরুজ্জামান খান ও মতিয়ার রহমান ৬০ শতক ও ৫০ শতক জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের কাজ করছেন। তাদের প্রত্যাশা, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দুই শতাধিক কেজি বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন। পাশাপাশি ৬০ শতাংশ জমিতে ৪০ থেকে ৪৫ মণ পেঁয়াজও উৎপাদিত হবে এখানে।
প্রান্তিক কৃষক কামরুজ্জান খান বলেন, ‘নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে পেঁয়াজের চারা রোপণ করেছি। মাঠে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে প্রাকৃতিক পরাগায়ন ঘটাতে মাছির অভাব দেখা দেওয়ায় এখন প্রতিদিন ফুলে হাত বুলিয়ে পরাগায়ন ঘটাতে হয়। মাঝে মাঝে পানি দিতে হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বীজ হারভেস্ট করা যাবে।’ বাজারমূল্য সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘এপ্রিলের পরেই বীজ বিক্রি করলে প্রতি কেজি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পাওয়া যাবে। তবে অক্টোবর-নভেম্বরে বিক্রি করলে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম ওঠে।’
এই ৬০ শতক জমিতে তার খরচ হবে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে সাড়ে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তবে তিনি আশা করছেন, এতে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় হবে। পেঁয়াজের বীজ সংরক্ষণ করে পরে উৎপাদন করাও সম্ভব।
স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, ‘কামরুজ্জামান খানের সফলতা দেখে আমিও আগামীতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে আগ্রহী হয়েছি। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
ইসলামপুর ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোছাঃ মাছুমা আক্তার বলেন, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের রাজধরপুর গ্রামের মোঃ কামরুজ্জামান খান ও মোঃ মতিয়ার রহমান প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে কাজ করে চলেছেন। বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সবসময় সার্বিক পরামর্শ প্রদান করে আসছে। আমি এই ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকায় সপ্তাহে কমপক্ষে ২ দিন মাঠে গিয়ে কৃষকের সাথে পরামর্শ করে উৎপাদন ঠিক রাখতে কথা বলে আসছি। কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষক চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় কৃষকদের যে কোন ফসলের বীজ উৎপাদনে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকের পাশে থেকে কাজ করে থাকে। চলতি বছরে বালিয়াকান্দি উপজেলায় পেঁয়াজের বীজ (দানা) উৎপাদনে উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে মোট ১২ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। তবে লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল ২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ হবে। কৃষকের অনিহার কারণে এটা পিছিয়ে পড়েছে। তবে উপজেলা কৃষি অফিস সব সময় কৃষকের পাশে থেকে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে থাকে। আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ মাঠে মাঠে গিয়ে কৃষকের সাথে মিলেমিশে কাজ করেন। দেশের স্বাভাবিক অবস্থা ধরে রাখতে কৃষির বিকল্প নেই বলেও মনে করেন এই উপজেলা কৃষি অফিসার।
তিনি আরও বলেন, মাঠে অসচেতন কৃষকগণ অতিরিক্ত হারে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে মাঠে মাছির পরিমাণ একদমই কম। একারণে ফুলে সঠিকভাবে পরাগায়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। সঠিক পদ্ধতিতে পরাগায়ণ ঘটলে বীজের ফলন ভালো হয়। তবে আমরা আশা করছি প্রতি বিঘায় ৮০-৯০ কেজি পেঁয়াজের বীজ (দানা) উৎপাদিত হবে। কৃষি বিভাগ বরাবরই সাধারণ কৃষকদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।