কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের স্মল হোল্ডার এগ্রিকালচার কম্পিটিটিভনেস প্রকল্পের রেইনস্ অংশের আওতায় সম্ভাবনাময় তিন নারী উদ্যোক্তাকে স্বাবলম্বী করতে বিনামূল্যে মার্কেট স্ট্যান্ড স্থাপনের উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।উপকরণ হিসেবে বিনামূল্যে মার্কেট স্ট্যান্ড স্থাপনের জন্য একটি ভ্যান, একটি ছাতা, ছয়টি ক্যারেট, একটি ওজন মাপার যন্ত্র, একটি ম্যাট ও একটি ইলেকট্রনিক্স পালস সিলার মেশিন দেয়া হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি বিপণন অধিদফতরের উদ্যোগে তিনজন সম্ভাবনাময় নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসার পরিসর বৃদ্ধির জন্য মার্কেট স্ট্যান্ড স্থাপনের উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।আজ (৭ জুলাই) কৃষি বিপণন অধিদপ্তর রাজশাহী কার্যালয়ে নারী উদ্যোক্তাদের হাতে এসব উপকরণসমূহ তুলে দেন কৃষি বিপণন অধিদফতর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক শাহানা আখতার জাহান।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের স্মল হোল্ডার এগ্রিকালচার কম্পিটিটিভনেস প্রকল্পের রেইনস্ অংশের আওতায় সম্ভাবনাময় তিন নারী উদ্যোক্তাকে স্বাবলম্বী করতে বিনামূল্যে মার্কেট স্ট্যান্ড স্থাপনের উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।উপকরণ হিসেবে বিনামূল্যে মার্কেট স্ট্যান্ড স্থাপনের জন্য একটি ভ্যান, একটি ছাতা, ছয়টি ক্যারেট, একটি ওজন মাপার যন্ত্র, একটি ম্যাট ও একটি ইলেকট্রনিক্স পালস সিলার মেশিন দেয়া হয়েছে।

সম্ভাবনাময় নারী উদ্যোক্তারা হলেন- পবা উপজেলার শিলিন্দা গ্ৰামে মোসা. জুলেখা বেগম, গোদাগাড়ী উপজেলার সেখালীপাড়া গ্ৰাম মোসা. নিলুফা বেগম, বাঘা উপজেলার মোমিনপুর গ্ৰামের জান্নাতুল ফেরদৌস মিতা।পবা উপজেলার সম্ভাবনাময় নারী উদ্যোক্তা সবজি ব্যবসায়ি জুলেখা বেগম বলেন, আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে আনসার আলীর সাথে তার বিয়ে হয়। তার স্বামীর সিটি হাটে ভাতের হোটেলের ব্যবসা করতো। এই আয় দিয়ে চলতো তাদের সংসার।

বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান হয়। অভাবের সংসারে  ছেলে-মেয়ে রেখে তার স্বামী হঠাৎ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর তার দু’চোখে অন্ধকার নেমে আসে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে তার চলা খুবই কষ্টকর হয়ে উঠে। সন্তান নিয়ে এখন কোথাই যাবেন? কি করবেন ? সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেন। এরপর শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। জীবন বাঁচাতে খেয়ে না খেয়ে অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করতে শুরু করেন।

জুলেখা বেগম জানান, অবশেষে কোন উপায় না পেয়ে শিলিন্দা এলাকার পরিচিত এক দাদার পরামর্শ ও বোনের সহযোগিতায় ৩ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে তেরোখাদিয়া স্টেডিয়ামের সামনে রাস্তার পাশে বিভিন্ন ধরনের সবজির ব্যবসা শুরু করেন। সারাদিন যা আয় হতো তা দিয়ে খুবই কষ্ট করে চলতো তার সংসার।

তিনি আরও বলেন দীর্ঘ ১০ বছল ধরে তিলে তিলে সবজির ব্যবসাটাকে ধরে রেখেছেন। তার সবজির দোকানে আলু, টমেটো, বেগুন, শিম, কপি, ফুল কপি, মুলা, শাক-সবজি, কলা, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচা মরিচসহ চাহিদা ও মৌসুম অনুযায়ী নানা ধরনের সবজি পাওয়া যায়। বর্তমানে তার সবজি দোকানে ভালো মালামাল বিক্রি হয়।

দৈনিক সবজি কেনা আর বিক্রি তিনি নিজেই করে থাকেন। স্থানীয় আড়ৎ থেকে সবজি কিনে নিজ দোকানে বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পযর্ন্ত আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকার উপর সবজি বিক্রি করা হয়। দৈনিক চারশো থেকে পাঁচশো টাকা খরচ বাদে আয় হয়।

এই সবজি বিক্রির আয় দিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।তিনি আরো জানান, আমি কোন মানুষের বোঝা হয়তে চায় না। ইচ্ছা করলে মানুষ অনেক কিছু করতে পারে আমি এই চেষ্টায় করছি। বর্তমানে এ ব্যবসা ভালই চলছে। ব্যবসার পরিসর বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিপণন অধিদফতর আমাকে সহযোগিতা করেছে। এতে আমি অনেক আনন্দিত হয়েছি। আমার মত অসহায় নারী উদ্যোক্তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। বিনামূল্যে ব্যবসার উপকরণ পেয়ে তিনি অনেক খুশি। এসব উপকরণের সঠিক ব্যবহার করে তিনি স্বাবলম্বী হতে চান।

এদিকে নিজেদের স্বচ্ছলতা আনয়নে সরকারিভাবে এমন সহায়তা পেয়ে আবেগ্লাপুত অন্যান্য উপকারভোগীরাও। তারা ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।কৃষি বিপণন অধিদফতর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক শাহানা আখতার জাহান বলেন, জীবন যুদ্ধে অসহায় নারীরা শত কষ্ট সহ্য করে পুরুষদের পাশাপাশি সবজির দোকানসহ নানা পেশায় কাজ করছেন। অসহায় নারীদের কাঁধে সংসারের বোঝা পড়ায় জীবিকার প্রয়োজনে তাদের সংসারের ঘানি টানতে হচ্ছে। এরই একজন জুলেখা বেগম। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে সবজি বিক্রি করে সংসারের ঘানি টানছেন।

তিনি পবা উপজেলার শিলিন্দা সড়ক বাজার এলাকায় সবজি বিক্রি করছেন। ইচ্ছা আর দৃঢ় মনোবলকে পুঁজি করে অসহায় হতদরিদ্র জুলেখা এখন আর সমাজের কোনো বোঝা নয়। তিনি বাজারে সবজি বিক্রি করে অভাব অনটনকে জয় করেছেন। জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়া এই নারী এলাকায় একজন আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বর্তমানে জীবন সচ্ছলতা থাকলে ও তার জীবন সংগ্রামের গল্প ছিল এক করুণ।

তিনি আরো জানান, জুলেখার মতো সম্ভাবনাময় নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসার পরিসর বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিপণন অধিদফতর কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এসএসিপি) এর আওতায় সম্ভাবনাময় নারী উদ্যোক্তাদের বিনামূল্যে মার্কেট স্ট্যান্ড স্থাপনের উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব উপকরণ ব্যবহার করে জুলেখা, নিলুফা ও মিতার মত অনেক নারী উদ্যোক্তা উপকৃত হয়েছেন।

আয়োজন প্রসঙ্গে জেলার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা (সংযুক্তিতে) আফরিন হোসেন জানান, রাজশাহীর তিন উপজেলায় সম্ভাবনাময় নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে বিনামূল্যে মার্কেট স্ট্যান্ড স্থাপনের উপকরণ হিসেবে ১টি ভ্যান, ১টি ছাতা, ৬টি ক্যারেট, ১টি ওজন মাপার যন্ত্র, ১টি ম্যাট ও ১টি ইলেকট্রনিক্স পালস সিলার মেশিন দেয়া হয়েছে। নারী উদ্যোক্তারা অনেক সংগ্রাম করে রোদ-বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নিচে কৃষিপণ্য বিক্রি করেন। এসব উপরণ ব্যবহার করে তারা স্বাচ্ছ্যন্দে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারবেন  এবং নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করতে পারবেন এমনটাই আশা আমাদের।