নাসাউয়ের কঠিন পিচে, শক্তিশালী বোলিং লাইন আপের বিপক্ষেও তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে এক আম্পায়ার্স কলে তছনছ হয়ে যায় টাইগারদের ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন। এদিন অবশ্য ভাগ্যও কিছুটা খারাপ ছিল শান্তদের। নিউ ইয়র্কে সোমবার (১০ জুন) বিশ্বকাপের ‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচে প্রোটিয়াদের কাছে ৪ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ১১৪ রান তাড়া করতে নেমে ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ১০৯ রানে থেমেছে টাইগাররা। ৩৪ বলে ৩৭ রান করে হৃদয় আর ২৭ বলে ২০ রান করে আউট হন মাহমুদউল্লাহ। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ২৭ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন কেশভ মহারাজ।
৫০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর পঞ্চম উইকেটে দলের হাল ধরেছিলেন হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ। দুজনের জুটিতে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার প্রোটিয়াদের হারানোর আশাও জেগেছিল টাইগার শিবিরে। তবে আম্পায়ার্স কলে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। ১৭ ওভার শেষে দলের সংগ্রহ তখন ৯৪ রান। ১৮ বলে প্রয়োজন ২০ রান। তখনই এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিতে থাকা হৃদয়। কাগিসো রাবাদার বলে আবেদন ওতো জোরালোও ছিল না। কিন্তু আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওর্থ দেন এলবিডব্লই। বলটি লেগ স্টাম্পের চূড়ায় হালকা ছুঁয়ে যায়। রিভিউ নিয়েও তাই কাজ হয়নি। আম্পায়ার্স কলে আউট ২ ছক্কা ও ২ চারের মারে ৩৪ বলে ৩৭ রান করা হৃদয়।
আগের ওভারে বাংলাদেশের ক্ষতি করেন অন্য ফিল্ড আম্পায়ার স্যাম নোগাস্কি। মাহমুদউল্লারহ প্যাড ছুঁয়ে পেছনে বাউন্ডারি হওয়া বলে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার। রিভিউতে দেখা যায় বল স্টাম্প মিস করেছে। কিন্তু আগে আউট দেয়ায় বাউন্ডারি পায়নি বাংলাদেশ। বল ডট হিসেবে গণ্য হয়। কপালটাও খারাপ বলা যায় টাইগারদের। শেষ দুই বলে যখন ৬ রানের প্রয়োজন তখন মহারাজের ফুলটস বলে সজোরে লং অনের ওপর দিয়ে তুলে মেরেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। সেটি সীমানার কাছ থেকে লাফিয়ে তালুবন্ধি করে নেন মারক্রাম। যেটা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না মাহমুদউল্লাহ। মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষণ বাউন্ডারির দিকে তাকিয়ে থাকেন তিনি।
এর আগে রান তাড়ায় নেমে শুরুটা ভালোই ছিল বাংলাদেশের। কাভারের পর ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট—কাগিসো রাবাদার ওপর চড়াও হয়ে টানা দুটি চার হাঁকান তানজিদ তামিম। তবে তার করা অফ স্টাম্পের বাইরের শেষ বলটি তাড়া করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। ৯ বলে ৯ রান করে আউট হন তিনি। পাওয়ার প্লেতে বেশি রান তুলতে না পারলেও বিপদ সামলেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাস। ৬ ওভার শেষে ১ উইকেট হারিয়ে ২৯ রান সংগ্রহ করেছিল টাইগাররা। কিন্তু পাওয়ার প্লে শেষ হতেই বিদায় নেন লিটন দাস
কেশব মহারাজের ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলটি তুলে মারতে গিয়ে কাভারে মিলারের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ১৩ বলে ৯ রানে থামে তার ইনিংস। কিছুক্ষণ পর অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসানও বিদায় নেন। ৪ বলে ৩ রান করে এনরিখ নরকিয়ার শর্ট বলে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। এরপর ক্রিজে নেমে তাওহিদ হৃদয় ছক্কা হাঁকিয়ে চাপ কমানোর চেষ্টা করলেও উল্টো বাড়িয়ে বিদায় নেন শান্ত। ২৩ বলে ১৪ রান করে তিনি নরকিয়ার শিকার হন। সেখান থেকে প্রতিরোধ গড়েছিলেন হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ। মহারাজ সর্বোচ্চ উইকেট নিলেও দারুণ বোলিং করেছেন এনরিখ নরকিয়া, কাগিসো রাবাদা ও মার্কো ইয়ানসেন। ১৭ রান দিয়ে নরকিয়া ২, ১৯ রান দিয়ে রাবাদা ২ উইকেট নেন। উইকেটশূন্য থাকা ইয়ানসেন খরচ করেন মাত্র ১৭ রান।
এর আগে বল হাতে দারুণ ছিল টাইগাররাও। ৪ ওভার বল করে মাত্র ১৮ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়েছিলেন তানজিম হাসান সাকিব, ১৯ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। উইকেটশূন্য থাকলেও মাত্র ১৮ রান খরচ করেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। তাতে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১১৩ রানে থেমেছিল প্রোটিয়ারা। যদিও ব্যাটারদের ব্যর্থতায় জয় সম্ভব হয়নি।
টানা ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘ডি’ গ্রুপ থেকে সুপার এইট নিশ্চিত দক্ষিণ আফ্রিকার। বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ভর করছে পরের দুই ম্যাচের ওপর। প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল টাইগাররা।