কিন্তু আয় বাড়েনি। সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সভায় আমদানি পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে ট্যারিফ কমিশনের উপ-পরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এবার রোজায় আমদানি করা পণ্যের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি থাকবে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম না বাড়লেও দেশে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করবে। এর বেশি বাড়বে না। কিন্তু টিসিবির বৃহস্পতিবারের মূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বছরের ব্যবধানে আমদানি করা প্রতি কেজি রসুন ৬৩.৬৪ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি আমদানি করা শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬৩.৯৩ শতাংশ বেশি দরে। পাশাপাশি প্রতি কেজি আমদানি করা আদা সর্বোচ্চ ১১১.১১ শতাংশ, জিরা ৯৪.৪৪ শতাংশ, লবঙ্গ ৩৯.৫৩ শতাংশ, গুঁড়া দুধ ৪০ শতাংশ, চিনি ৫০.৩৩ শতাংশ, অ্যাঙ্কর ডাল ৪৭.৯৬ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ছোলা প্রতি কেজি ১৬.৬৭ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। গড়ে ৫৯ শতাংশ বেশি। জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার সব ধরনের পণ্যের দাম বেশি।
তারও কিছু যৌক্তিক কারণ আছে। তবে অযৌক্তিক কারণও আছে। তার মধ্যে আছে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা করার প্রবণতা। রোজা এলেই বাজারে তারা অস্থিরতা তৈরি করে। রোজা শুরুর দুই মাস আগেই পণ্যের দাম বাড়ায়। এবারও সেটা করেছে। ক্রেতাকে জিম্মি করে তারা অতি মুনাফা লুটতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে, এবার রোজায় পণ্যমূল্যে বাড়তি দর ক্রেতাকে অতিষ্ঠ করে তুলবে। তাই এখন থেকেই উদ্যোগ না নিলে মূল্য স্বাভাবিক রাখা কঠিন হবে। টিসিবি সূত্র জানায়, বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা, যা গত বছর একই সময় রোজার আগে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, যা গত বছর একই সময় ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা, যা আগে ৩৫০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি হলুদ বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা, যা আগে ১৮০ টাকা ছিল। গত বছর রোজার আগে ৪২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া জিরা বর্তমানে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৩৮০ টাকা কেজি প্রতি দারুচিনি ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১১৫০ টাকা বিক্রি হওয়া লবঙ্গ বর্তমানে ১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজার আগে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধ ৬২০-৬৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তবে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮২০-৯০০ টাকা। ৭৮ টাকা দরে বিক্রি হওয়া প্রতি কেজি চিনি এখন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি অ্যাঙ্কর ডাল বিক্রি হয়েছে ৭৫ টাকা, যা আগে ৫০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা, যা গত বছর একই সময় ৮০ টাকা ছিল। কাওরান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. দুলাল বলেন, বাজারে সব বিক্রেতা এক। তারা ক্রেতার পকেট কাটতে বসেছে। এখন বাজারে সব ধরনের পণ্যের দামে আগুন। রোজার এতদিন আগেই এমন অবস্থা বিরাজ করছে। রমজান মাস যত ঘনিয়ে আসবে পণ্যের দামের পারদ আরও বাড়তে থাকবে। কিন্তু আমাদের আয় আর বাড়বে না। তাই মনে হচ্ছে রোজায় পণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হবে। তাই এখন থেকেই বাজারে তদারকি জোরদার করতে হবে। অসাধু বিক্রেতাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, পণ্যের দাম বাড়ানোর পেছনে আমরা দায়ী নই। আমাদেরই বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। বেশি দামে এনে ক্রেতার কাছে বেশি দামেই বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। দাম যা বাড়ানোর আমদানিকারকরা বাড়াচ্ছে। কারসাজি যা করার তারাই করে।
রাজধানীর শ্যামবাজারের পণ্য আমদানিকারকরা জানান, আদা-রসুন আমদানিতে এলসি স্বাভাবিক না হলে দাম আরও বাড়বে। ডলারের মূল্য অনেক বেড়েছে। ব্যাংকে এলসি খোলা যাচ্ছে না। অনেক জটিল হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে এলসি জটিলতা দূর করাসহ শুল্ক প্রত্যাহার করে পণ্য আমদানি বাড়ানোর সুযোগ দিতে হবে। এখন থেকে যদি পণ্য আমদানি করা না যায় তাহলে রমজানে পণ্যের দাম আরও বাড়বে। এ বিষয়ে ক্যাবের সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর জন্য একেক সময় একেক বাহানা সামনে নিয়ে আসেন। একসময় বলেন, ডলার সমস্যা। আবার এর মধ্যে বলেছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি দাম বাড়াচ্ছে। এখন আবার এলসি সমস্যাকে অজুহাত হিসাবে এনেছেন।
তিনি বলেন, রমজানের জন্য যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রয়োজন, সেগুলো ইতোমধ্যেই এলসি করা হয়েছে। কারণ পণ্য আসার দুই থেকে তিন মাস আগে এলসি করতে হয়। সে অনুসারে রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ইতোমধ্যেই বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এলসি ইস্যুটা একটা অজুহাত মাত্র। জানতে চাইলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, আসন্ন রমজান মাসে বাজার মনিটরিং অব্যাহত আছে। তা আরও জোরদার করা হবে। প্রতি বছর রোজায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে বাজার অস্থির হয়ে যায়। আসন্ন রমজান মাসে এসব অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবে ভোক্তা অধিদপ্তর।