রাঙ্গামাটির লংগদুতে আনুমানিক রাত তিনটার দিকে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ কে রাতের আধাঁরে ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক ধর্ষণ চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন আটারকছড়া ইউনিয়নের এক গৃহবধূ ও তার পরিবার। 

ভিকটিম জানায়, রাতে তিনি তার তিন শিশু সন্তান নিয়ে নিজের কুড়ে ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। হঠাৎ রাত তিনটায় তার ঘরে কেউ ঢুকে পড়ে। আমি ঘুমে থাকায়, আমাকে ঝড়িয়ে ধরলে আমার ঘুম ভঙ্গে, আমি সজাগ হয়ে দেখি মুখে গামছা বাঁধা একজন ব্যক্তি আমাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করছে। আমার পরণের মেস্কি (কাপড়) দিয়েই আমার মুখ বেঁধে ফেলে,আমি জিজ্ঞেস করি কে আপনি? কেন এমন করছেন? সে বলছে আমাকে চায় তিনি, আমি রাজি না হওয়ায় আমাকে খাটের থেকে মাটিতে ফেলে দেয় এবং আমার ঘরের বটি দা দিয়ে আমার গলায় ধরে, বলে চিৎকার করলে জানে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। তারপরেও আমি ধস্তাধস্তি করি তখন পাশের বাড়ির ভাবি আওয়াজ পেয়ে তিনি আমাকে ডেকে জানতে চায় কি হয়েছে। তখন আমি আমার ঘরে চোর ডুকেছে বলে তাকে আসতে বললে লোকটি তার নিজের বাটন সেট মোবাইল রেখে পালিয়ে যায়। লোকটি কে ছিলো জানতে চাইলে তিনি বলেন,তার মুখ বাঁধা থাকায় চেহারা দেখিনি, তবে আচার-আচরণ ও কথাবার্তা এবং শরীর দেখে যা বুঝেছি তিনি ছিলেন আদু। এছাড়াও তার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খুঁজ নিয়ে জানতে পারি লোকটি ছিলো আবু সালেহ (আদুল)। আমার এলাকার খালেক মুন্সির ছেলে।

ভিকটিমের দশ বছরের ছেলে বলেন, আমার আম্মু যখন চিৎকার করে তখন আমার ঘুম ভাঙ্গে, আমি ভয়ে কান্নাকাটি করি। লোকটা মাকে ধরে ধ্বস্তাধ্বস্তি করতেছে।

চিৎকার চেচামেচি শুনে পাশের বাড়ির গৃহবধু এগিয়ে আসলে অপরাধী পালিয়ে যায়। তিনি জানায় আমি এসে দেখি ভিকটিম কাঁপতেছে,অবস্থা খারাপ দেখে দ্রুত আসপাশের লোক ডেকে তার স্বামীর ছোট ভাই হাছানের মাধ্যমে ভোর চারটায় লংগদু হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ডাক্তার খাগড়াছড়িসদর হাসপতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করে। 

গৃহবধুর খালা, যিনি হাসপাতালেই মহিলার পাশে ছিলেন তিনি জানান, আমরা খেয়ে না খেয়ে হাসপাতাল ছিলাম। রোগীর অবস্থা ভালোনা, বমি আর পেট ব্যথায় ভুগছেন। আমাদের নিয়ে এলাকার মানুষজন কাঁদা ছুড়াছুঁড়ি করছে। আমরা গরীব মানুষ আমরা ঝামেলা করতে পারবোনা। আমরা বিচার চাই। এছাড়াও তিনি বলেন, কারা যেনো হাছানের হাতে বিশ হাজার টাকা দিয়েছেন আমরা টাকা রাখিনি। রোগীকে ছয়দিন পর হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসে থানায় মামলা করেছি।

দেবর হাছানকে ফোন করলে, তিনি বিভিন্ন ভাবে এড়িয়ে যেতে চাইলেও পরে স্বীকার করে বলে ঘটনা সত্য, আমরা আদুর মোবাইল পেয়েছি, রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন ,তাই খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। তবে এবিষয়ে নিউজ বা লেখালেখি না করার জন্য বলেন সে। ঘটনার পরদিন বিষয়টি ভালো ভাবে জানার জন্য তাকে আবার ফোন করা হলে সে জানায়,আমরা যে মামলা করবো লংগদু হাসপাতালের ছাড়পত্র হারিয়ে গেছে কি ভাবে করবো? আপনাকে অপরাধীর পক্ষ হতে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নেও তিনি অস্বীকার করে বলে আমাকে টাকা দেয়নি। 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আবু সালে (আদু)"র বাবা খালেক মুন্সি বলেন, আমার ছেলে একাজ করতে পারেনা। ঘটনার রাতে তারা একটা মোবাইল ফোন নিয়ে আমার বাড়ি আসে, আসার পর দেখি এটা আমার ছেলের মোবাইল। তারপর ছেলের বউয়ের নাম্বারে কল দিলে তখন জানি ছেলে ঘরে আছে। সকালে শুনি আমার ছেলের ঘরও চুরি হয়েছে। তিনি বলেন কেউ চুরি করে আমার ছেলেকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তিনি দাবী করে জানান সঠিক ভাবে তদন্ত করা হোক। এদিকে আবু সালেহের সাথে কথা বলার জন্য চেষ্টা করলে, তার বাবা জানান সে বাড়িতে নাই জমিনে কাজ করছেন। পরে আবু সালেহের নাম্বারে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করে সাথে সাথে ফোন বন্ধ করে দেয়। 

এদিকে একই রাতে আবু সালেহের বাড়ি চুরি হওয়ার ঘটনার পর সে অজ্ঞাতনামা দিয়ে থানায় অভিযোগ করে,কিন্তু পরবর্তীতে তা নিজে থেকে স্থানীয় ভাবে সমাধান করবে বলে অভিযোগ প্রত্যাহার করে।

খাগড়ছড়ি সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত আর এম ও ডাক্তার রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, রাবেয়া নামে একজন ভর্তি ছিলেন, তবে আমি এখন বাহিরে থাকায় বিস্তারিত বলতে পারছিনা। 

লংগদু থানার ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, ভিকটিমের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে আবু সালেহ নামের একজনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। আমাদের পুলিশ তদন্ত করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীকে শনাক্ত করে আদালতে সোপর্দ করা হবে।