সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লোকসংস্কৃতি গবেষণা ও উন্নয়ন আহ্বায়ক সূফী মোহাম্মদ। তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, একটি দেশ বা একটি জাতির আত্মপরিচয় তার লোকসংস্কৃতি।কৃষি ও শ্রমজীবী সাধারণ মানুষকে কেন্দ্র করেই উদ্ভব হয়েছে লোকসংস্কৃতির। বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি এদেশের মূল সংস্কৃতির ভিত্তি। তাই বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধে দেশজ সংস্কৃতির বিকাশ, দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই নতুন প্রজন্মের মাঝে লোকচর্চার বহুদূরপ্রসারী ব্যবস্থার জন্য লালমনিরহাট জেলা সদরে লোকসংস্কৃতি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। লোকসংস্কৃতি, অনুষ্ঠানজাত লোকসংস্কৃতি এবং প্রার্থনামূলক লোকসংস্কৃতি বিষয়ে চর্চাবৃদ্ধি, গবেষণা, উন্নয়ন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সে উপলক্ষ্যে আগামী ২ থেকে ৪ মার্চ, ২০২৩, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ৩দিনব্যাপী লালমনি লোকউৎসব ১৪২৯ এর আয়োজন করা হয়েছে।
এ উৎসবের মূলমন্ত্র শেকড়ে সৃজনে মুক্তি। উৎসবটি পালিত হবে লালমনিরহাটের ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী ঘূর্ণায়মান নাট্যমঞ্চ এম, টি, হোসেন ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সুদীর্ঘ গৌরোবোজ্জ্বল ইতিহাসে উত্তরের এক ঐতিহ্যবাহী জনপদ লালমনিরহাট। দু’শ বছরের ব্রিটিশ শাসনামলে পাশ্চাত্য সভ্যতার সাথে ভারতীয় সংস্কৃতির সমন্বিত বিকাশ ঘটেছিল এ জনপদে। লালমনিরহাটে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এয়ারপোর্ট ও বিভাগীয় রেলওয়ের সদর দপ্তর হওয়ার কারণে উচ্চপদস্থ দেশিয় ও বিলেতি সাহেবেরা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। এখানে একটি সুস্থ ও উঁচুমানের সাংস্কৃতিক আবহের বিকাশ ঘটেছিল। ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এম, টি, হোসেন ইনস্টিটিউটের কার্যালয় বর্তমান রেল স্টেশনের পশ্চিমে উর্দূ স্কুলে স্থানান্তর করা হয়। এতে তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের অবহেলায় পড়ে যায়। এ সুযোগে একশ্রেণীর মানুষ অসামাজিক কার্যকলাপ ও মাদকের অভায়ারণ্যে পরিনত করে।
দিনে দিনে হারিয়ে যেতে থাকে এর মূল্যবান সামগ্রী ও ঐতিহ্যবাহী সম্পদগুলো। দখল করে নেয় এর প্রাঙ্গন, খুলে নিয়ে যায় ইট, লোহা।আজ এর কঙ্কালসার অবস্থা দেখলে কোনভাবেই বোঝার উপায় নেই যে,একসময় এর এত গৌরবময় অতীত ছিল। সেই এম, টি, হোসেন ইনস্টিটিউট আজ ধ্বংসপ্রায়। এ ইনস্টিটিউট পুনঃসংস্কারের যৌক্তিক দাবি নিয়ে ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদ-এর ব্যানারে আন্দোলন চলমান। তাই সর্বস্তরের মানুষের সম্প্রীতির তীর্থস্থানে পরিণত করতে শেকড়ে সৃজনে মুক্তি স্লোগানে তিন দিন ব্যাপী এ আয়োজন। এখানে থাকছে কামার শালা, মৃৎ শিল্পীরা কিভাবে কাজ করে তার নমুনা। বাউলরা সংগীতগন। এক বিয়েরগীত গাওয়ার জন্য থাকছে ৮০ জনের একটি শিল্পী দল। আর ও থাকছে সাপের খেলা, বানরের খেলা, যাত্রাপালা সহ অনেক কিছুই। অনু্ষ্ঠানের প্রচার কমিটির আহব্বায়ক মাসুদ রানা রাশেদ, সদস্য সচিব হেলাল হোসেন কবির। সংবাদ সম্মেলন ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।