ভোলার মনপুরা উপজেলায় শখের বসে পালন করা বিষধর গোখরা সাপের কামড়েই মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে মো. শাকিল হোসেন (২৫) নামের এক যুবকের। ৮ মাস ধরে পরম যত্নে লালন করা সাপটিই শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যুর কারণ হলো। রবিবার (০৬ জুলাই) ভোরে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত শাকিল উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা খোকন মাঝির ছেলে।
এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় আট মাস আগে স্থানীয় একটি বাড়ি থেকে একটি বিষধর গোখরা সাপ উদ্ধার করেন শাকিল। এরপর থেকে সাপটিকে তিনি শখের বসে লালন-পালন করতে শুরু করেন। সাপটি অত্যন্ত বিষধর জেনেও তিনি প্রায়ই সেটিকে নিয়ে বিপজ্জনক খেলায় মেতে উঠতেন।
এর আগেও একবার বিপদ সংকেত পেয়েছিলেন শাকিল। প্রায় তিন মাস আগে সাপটি নিয়ে খেলা করার সময় তার পায়ে কামড় দেয়। সেবার তিনি নিজের মুখ দিয়ে কামড়ের স্থানের রক্ত চুষে ফেলে সুস্থ হয়েছেন বলে ধারণা করেন। এই ঘটনাই হয়তো তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে কাল হয়ে দাঁড়ায়।
শনিবার সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার দিকে শাকিল পুনরায় সাপটি নিয়ে খেলা করছিলেন। এ সময় হঠাৎ করেই সাপটি তার পায়ের উরুতে ছোবল দেয়। আগেরবারের মতো এবারও তিনি মুখ দিয়ে বিষ নামানোর চেষ্টা করেন এবং সাপটিকে নিয়ে বাসায় ফেরেন। কিন্তু এবার তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
পরিবারের সদস্যরা তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে না নিয়ে স্থানীয় লালু ওঝার কাছে নিয়ে যান। সেখানে ঝাড়ফুঁকের পর শাকিল ঘণ্টাখানেক সুস্থ বোধ করলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার অবস্থা গুরুতর হতে থাকে। রাত প্রায় ১১টার দিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ভোর ৪টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শাকিল।
এ বিষয়ে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, "সাপে কামড়ালে ওঝা বা কবিরাজের কাছে নিয়ে ঝাড়ফুঁক করাটা আত্মহত্যার শামিল। এতে শুধু মূল্যবান সময়ই নষ্ট হয়। রোগীকে অনেক দেরিতে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। দ্রুত আনা সম্ভব হলে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করে হয়তো তাকে বাঁচানো যেত।" তিনি আরও বলেন, "মুখ দিয়ে বিষ চুষে বের করার ধারণাটিও সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক ও ঝুঁকিপূর্ণ। এতে বিষ বের হয় না, উল্টো মুখে বা গলায় সংক্রমণ হতে পারে।"
একটি শখ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিকিৎসার বলি হয়ে তরতাজা এই যুবকের মৃত্যুতে এলাকায় গভীর শোক বিরাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্য ও বিষাক্ত প্রাণী পালন করা এবং সেগুলোর সঙ্গে খেলা করা অত্যন্ত বিপজ্জনক, যা এ ধরনের মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।