রাজশাহীর তানোরে উপজেলা পরিষদ চত্বরের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে তানোর উপজেলা তালন্দ ইউপির বিলশহর গ্রামে। হত্যার স্বীকার ওই আ’ লীগ কর্মির নাম জিয়াউর রহমান (৪২)। তিনি বিলশহর গ্রামের মৃত মহির উদ্দীনের পুত্র।
বুধবার ভোর ৫টার গ্রামবাসী ক্ষত বিক্ষত লাশ ও মটরসাইকেল রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখে নিহতের পরিবার ও পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে তানোর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন এবং সন্দেহ মুলক ভাবে এক নারীসহ ৩জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।
আটককৃতরা হলেন, তালন্দ ইউনিয়ন আ’ লীগ সাধারন সম্পাদক ও তালন্দ ইউপির ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল হাসান আলীর ২য় স্ত্রী বিলশহর গ্রামের তারাবানু সুমি (৩২), লালপুর গ্রামের লথুর পুত্র ফরহাদ আলী (৩৪) ও একই গ্রামের আলাউদ্দিনের পুত্র সোহান আলী (৩০)।এঘটনার তদন্তে ঘটনাস্থলে পিবিআই ক্রাইম সিনের টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এলাকাবাসী ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে হাসান মেম্বারের সাথে বর্তমান তালন্দ ইউপির চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু ও জিয়াউর রহমানের মধ্যে ত্রিমুখী দ্বন্দ চলে আসছিলো।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে হাসান মেম্বার লোকজন নিয়ে জিয়াউর রহমানের ও নাজিমউদ্দিন বাবুর নলকুপ দখলের জন্য তালা মেরে দেয়ার বাবুকে গোল্লা পাড়া বাজারে শারিরিক ভাবে লাঞ্চিত করেন। এর পরে জিয়াউরের খড়ের পালা আগুনে পড়ে যায়। এর কিছুদিন পরে গত বৃহস্পতিবার রাতে লালপুর বাজারস্থ হাসানের দোকান আগুনে পুড়ে যায়।এর পর থেকেই হাসান মেম্বারের লোকজন জিয়াউর রহমানকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকি দেয়ার পাশাপাশি নারায়ানপুর বাজার মোড়ে মারার জন্য চেষ্টা করেন। এসময় টের পেয়ে জিয়াউর সেখান থেকে সটকে পড়েন। গত ২০ ফেব্রুয়ারী রাত ১২ টা ১ মিনিটে তানোর উপজেলা পরিষদ চত্বর শহীদ মিনার ফুল দিয়ে গেলে সেখানেও হাসান মেম্বারের লোকজন ও আটক ফরহাদ জিয়াউর রহমানকে হুমকি ধামকি দেন।
পরে ফুল দিয়ে জিয়াউর মটরসাইকেল যোগে বেলপুকুরিয়া হয়ে নিজ বাড়ি বিলশহর গ্রামে ফেরার পথে বিলশহর গ্রামের মেইন পাকা রাস্তার উপর হামলা চালিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জিয়াউর রহমানের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তবে, কে বা কারা জিয়াউরকে হত্যা করেছেন পুলিশ নিশ্চিত হতে না পারলেও সন্দেহ মুলক ভাবে ১ নারীসহ ৩ জনকে আটক করেছেন।অপর দিকে ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন হাসান মেম্বার ও তার লোকজন। ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজের পাশাপাশি নিহতের পরিবারসহ বিলশহর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এবিয়ে যোগাযোগে জন্য হাসান মেম্বারের মুঠো ফোনে একাধীকবার অভিযোগ করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বর্তমান তালন্দ ইউপির চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তানোর থানার দায়িত্ব প্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, লাশের ময়না তদন্ত শেষে বিকালে পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। রাতে লাশ দাফনের পর এবিষয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হবে। কারা হচ্ছেন আসামী তা জানাতে চাননি তিনি। তবে, তিনি বলেন, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদেের আটক করা হয়েছে। রাতে মামলা দায়েরের পরই বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে বলে জানান তিনি।