গুড়া শেরপুরে মহান বিজয় দিবস উদযাপনকে ঘিরে অভিনব প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভুয়া সিল-স্বাক্ষর ব্যবহার করে স্থানীয় বিভিন্ন ধর্নাঢ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র।

বিগত চার-পাঁচদিন এভাবে টাকা আদায় করা হলেও গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর প্রশাসনে শুরু হয় তোলপাড়। সেইসঙ্গে চক্রটিকে ধরতে মাঠে নামেন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি ওই প্রতারকদের বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক) নিজ আইডি থেকে সতর্কবার্তা পোস্ট করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহান বিজয় দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে অনুদান সংগ্রহের নামে মাঠে নামেন সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটির সক্রিয় সদস্যরা। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলার বিভিন্ন ধর্ণাঢ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে টাকা দাবি করেন। এক্ষেত্রে অভিনব কৌশল হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভুয়া সিল-স্বাক্ষর ব্যবহার করেন তারা। যাতে করে তাদের প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ না পায়। এভাবে বেশ কয়েকদিন হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেন চক্রটির সক্রিয় সদস্যরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, দুই-তিনজন অপরিচিত ব্যক্তি তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসেন।

তারা নিজেদেরকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয় দেন। সেইসঙ্গে বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে অনুদান হিসেবে পাঁচশ’ থেকে দশ হাজার পর্যন্ত টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে দেরি হলে নানা হুমকি-ধামকিও দেন তারা। পরে তাদের দাবিকৃত টাকা নিয়ে ভুয়া সিল-স্বাক্ষর সম্বলিত সাদা কাগজের টাকা আদায়ের রশিদ দিয়ে চলে যায়। এরপর জানতে পারেন ওইসব টাকা আদায়কারীরা প্রতারক চক্রের সদস্য। তখন আর করার কিছুই নেই বলে মন্তব্য করেন তাঁরা। শহরের সোলায়মান আলী নামের এক ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, গত বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের ন্যায় এবারো জাকজমকপূর্ণভাবে বিজয় দিবস পালিত হবে। এতে অনেক টাকা খরচ হবে। প্রথমে তার কাছে পাঁচ হাজার টাকা চাওয়া হয়। তাদের কথাবার্তায় সন্দেহ হলে টাকা দিতে অস্বীকার করেন। পরে সিল-স্বাক্ষর সম্বলিত কাগজের রশিদ প্রদর্শন করেন।

এরপর ভয়ে তাদের এক হাজার টাকা অনুদান দেন বলে দাবি করেন তিনি। আব্দুর রাজ্জাক নামের আরেক ব্যবসায়ী একই ধরণের মন্তব্য করে বলেন, তিনি তাদের পাঁচশত টাকা অনুদান দিয়েছেন। তবে শুরুতে এই অল্প টাকা নিতে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে রশিদ দিয়ে উক্ত টাকা নিয়ে যান তারা। পরবর্তীতে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হলে তিনি কোনো ধরণের টাকা দিতে নিষেধ করেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা বলেন, বিষয়টি জানার পরপরই প্রতারক চক্রটি সম্পর্কে সর্তক থাকার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। সেইসঙ্গে মহান বিজয় দিবসকে ঘিরে এই ধরণের কর্মকাণ্ডে জড়িতদের চিহিৃত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনী অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে দাবি করেন তিনি।