শেরপুরের নকলা উপজেলার কমিনিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) বেতন নয়মাস যাবৎ বন্ধ থাকায় তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন; নিরানন্দ তাদের ঈদ। 
প্রাপ্ত তথ্য মতে, গ্রামীণ জনগনের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে দেশের প্রতিটি পুরাতন ওয়ার্ডে একটি করে কমিনিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পরে সেখানে একজন করে সিএইচসিপি নিয়োগ করা হয়।

বিগত ৯ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেনা নকলা উপজেলার ২৪ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। এনিয়ে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে বেতন না পাওয়া তৃণমূল পর্যায়ে জনগনকে সেবাদানকারী এই স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে। 
বিষয়টি নিয়ে অজ্ঞাত কারনে মুখ খুলছেন না সংশ্লিষ্ট তদারকি কর্মকর্তাসহ দায়িত্বশীলরা। ফলে এসব স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যে দুঃশ্চিন্তার ভার আরও বাড়ছে।

গত বছরের জুনমাস পর্যন্ত নিয়মিত বেতন ভাতা প্রদান করে আসলেও জুলাই মাস থেকে আজ পর্যন্ত ৯ মাস ধরে তাদের বেতন ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে সিএইচসিপিরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ঈদের আনন্দ তাদের পারবারের সদস্যদের যেন স্পর্শ করতে পারছেনা।

বাউসা ক্লিনিকের সিএইচসিপি এস.এম মনিরুজ্জামান, ধনাকুশা ক্লিনিকের রেজওয়ানা পারভীন, ধুকুড়িয়া ক্লিনিকের লূৎফর রহমান, ভ‚রদী ক্লিনিকের বিজলী, কায়দা ক্লিনিকের সুমা, বিহারীপাড় ক্লিনিকের শিরিনা, টালকী ক্লিনিকের শিল্পীসহ অনেক কমিনিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপির সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন মূলক প্রকল্পের এ চাকরির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত ভালো ভেবে অন্যকোন চাকরির চেষ্টা করেননি। বর্তমানে তাদের মতো প্রায় সব কমিনিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হয়েছে। এমতাবস্থায় মাসের পর মাস বেতন ভাতা বন্ধ থাকায় তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। বিশেষ করে পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরের কেনাকাটা করতে তাদেরকে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

অনেকে জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এতে দেশের গ্রামিণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৪ হাজারের অধিক বেকার যুবক-যুবনারীর। স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন বন্ধের বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছেন তারা।

বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে তাদেরকে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনযাপন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে বেতন ছাড় না হলে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে কাজের আগ্রহ ও মনযোগ নষ্ট হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। ফলে বিষয়টি নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন সুশীলজন।

সংশ্লিষ্ট অনেকে জানান, এরইমধ্যে কমিনিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) চাকরিটি ট্রাষ্ট থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাই সিএইচসিপি পদ, যোগ্যতা ও বেতন ভাতাদি পুনরায় পর্যালোচনা করে তাদের পদটিকে ১৪ কোড থেকে নামিয়ে ১৬ কোডে আনা হয়েছে। তাই বেতন ভাতা ছাড় করনে দেড়ি হচ্ছে।

এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, বেতান বন্ধের এই সমস্যা শুধু নকলা উপজেলার সিএইচসিপিদের জন্য নয়। সারা দেশের সকল কমিনিউনিটি ক্লিনিকের প্রায় সাড়ে তেরো হাজার সিএইচসিপি’র বেতন-ভাতা এক সঙ্গে বন্ধ রয়েছে। তবে অর্থপ্রাপ্তি হলেই দ্রæত সময়ের মধ্যে তাদের বেতন-ভাতা ছাড় করণ হতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।