এক সময় ধারণা ছিল দাজিলিং জাতের কমলা শুধু পাহাড়ি অঞ্চলেই চাষ হয়। তবে সেই ধারণা পাল্টে গেছে। এখন দাজিলিং ও চায়না মেন্ডারিং জাতের কমলার চাষ হচ্ছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সমতল ভূমিতে। উপজেলার সাতখামাইর পশ্চিম পাড়া এলাকায় দাজিলিং ও চায়না মেন্ডারিং জাতের কমলা চাষ করে সফল হয়েছেন চার উদ্যোক্তা। চার উদ্যোক্তা মিলে দুই বিঘা জমিতে দুই জাতের কমলার চাষ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় খুশি চাষিরাও। ভবিষ্যতে আরও বেশি ফলনের আশা করছেন চাষিরা।সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর পশ্চিম পাড়া গ্রামে দেখা গেছে, কমলা বাগানের প্রবেশমুখে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা হলুদ ও সবুজ বর্ণের কমলা। প্রতি থোকায় কমপক্ষে ১০টি করে কমলা ঝুলে আছে। দার্জিলিং জাতের কমলা আকারে বড়। মৌসুমের শেষ দিকে হওয়ায় প্রায় প্রতিটি গাছে শোভা পাচ্ছে দার্জিলিং জাতের কমলা। চায়না জাতের হলুদ সবুজ বর্ণের মেন্ডারিং কমলা থোকায় থোকায় ঝুলে গাছের ডালপালা নুইয়ে পড়েছে। সারিবদ্ধভাবে দর্শনার্থীরা বাগানে প্রবেশ করে গাছ থেকে কমলা ছিঁড়ে খাচ্ছেন। নিজ দেশে নিজ হাতে কমলা ছিঁড়ে খাওয়া স্বপ্নের মতো বলে জানিয়েছেন অনেক দর্শনার্থী।বাগানের উদ্যোক্তারা হলেন- ওয়ালিউল্লাহ বায়েজীদ, ফারুক আহমেদ, আবদুল মতিন ও আইনুল হক। শ্রীপুর উপজেলা সদর থেকে অথবা মাওনা চৌরাস্তা ওয়াপদা মোড় থেকে টেংরা গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামান্য পূর্ব পাশে কমলা বাগানটি চোখে পড়ে। কমলা ছাড়াও বাগানে পাওয়া যায় বিভিন্ন জাতের আম, বলসুন্দরী বরই, সফেদা, জাম্বুরা ও ড্রাগন ফলউদ্যোক্তা সবুজ মিয়া জানান, চার বন্ধু মিলে বাগান করার পরিকল্পনা করা হয়। নাটোরের কৃষিবিদ গোলাম মাওলাসহ অভিজ্ঞ কয়েকজনের কাছ থেকে চারা ও পরামর্শ নিয়ে তারা সেখানে বাগান শুরু করেন। তারপর প্রায় দেড় একর জায়গার মধ্যে ১৫০টি কমলার চারা রোপণ করা হয়। এর মধ্যে ১০০টি দার্জিলিং এবং ৫০টি চায়না মেন্ডারিং জাতের। এ পর্যন্ত দার্জিলিং জাতের ৭০টি গাছে ফলন এসেছে। প্রতিটি গাছে কমপক্ষে ২০ কেজি পরিমাণ কমলা এসেছে। ৩০০ টাকা কেজি দরে দার্জিলিং কমলা বিক্রি হচ্ছে। তারা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এর চেয়ে বেশি ফলন হবে। গত বছরও ভালো ফলন হয়েছিল।উদ্যোক্তা ওয়ালীউল্লাহ বায়েজীদ বলেন, আমাদের বাগানে প্রধান ফল কমলা এবং আম। দার্জিলিং এবং চায়না মেন্ডারিং কমলা মূলত ভারত ও সিলেটের লাল মাটিতে উৎপাদন হয়। ২০০০ সালে ঝিনাইদহে কমলার উৎপাদন দেখেছি এবং তা থেকেই কমলা চাষে উদ্যোগী হই। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেফিরে দেখি গাজীপুরের লাল মাটিতেও কমলা উৎপাদন সম্ভব। এখানে রোাপণের পর উৎপাদনের প্রথম বছরেই দু-তিনটা কমলা এক কেজি পরিমাণ ওজন হয়েছে। ২০২৩ সালে দার্জিলিং ও মেন্ডারিং দুটোই ভালো উৎপাদন হয়েছে।নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গাজীপুরের ফাঁকা লাল মাটির জমি ফেলে না রেখে কৃষি অফিসের সহায়তায় কমলা উৎপাদন সম্ভব। পরিচর্যা ঠিকমতো রাখতে পারলে দেশের বাইরে থেকে আনা কমলার যে গুণগত মান তা থেকে আমাদের দেশের কমলার গুণগত মান সেরা হবে।কমলার ফুল আসা থেকে শুরু করে হার্ভেস্ট করা পর্যন্ত কোনো মেডিসিন প্রয়োগ করতে হয় না। ফুল আসার আগে গাছের সুস্থতার জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। দেশের মাটিতে যে কমলা হয়ে থাকে সেগুলো সুমিষ্ট এবং রসালো হয়। আমরা আশা করছি, কোনো একসময় দেশের বাইরে থেকে কমলা আমদানি করতে হবে না। সবাইকে কমলা চাষে উৎসাহী হওয়ার আহ্বান জানাই।দর্শনার্থী সাদিয়া সুলতানা জানান, গাজীপুরের মাটিতে কমলার চাষ হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। কৃষিবিজ্ঞানীদের অবদানের কারণে কমলা এখন প্রায় বিভিন্ন জেলায় উৎপাদন হচ্ছে। কমলা ঝুলে থাকার দৃশ্য আমাকে বিমোহিত করেছে। এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বলেন, আমদানিনির্ভরতা কমানোর জন্য অনেক চাষিকে আমরা কমলা চাষে উৎসাহিত করছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে চাষিদের দার্জিলিং জাতের কমলার চারা সরবরাহ করছি। শ্রীপুর উপজেলা কমলা চাষে একটা উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় জায়গা।