শ্রীমঙ্গলে গারো জনগোষ্ঠীর "ওয়ানগালা" উৎসব উদযাপন। "মিশি শালজং" যিনি শস্য দেবতা নামে পরিচিত। প্রতিবছর " মিশি শালজং" নামে উৎপাদিত( জুম চাষে উৎপন্ন ফসলাদি) শস্য দাতা আর্শীবাদ,সুঃখ,দুঃখ, হাসি খুশি, আনন্দ,ঘুরাফেরা,খাওয়া দাওয়া, নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন পালন, কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন উৎসর্গ করে থাকে। ওয়ানগালা উৎসব গারোদের "নবান্ন উৎসব" নামে বেশ পরিচিত।
গারো'রা প্রাচীনকালে আদি শস্য দেবতা প্রকৃতির পূজা অর্চনার মাধ্যমে ওয়ানগালা উদযাপন করতেন। বর্তমানে অধিকাংশ গারো'রা খ্রীষ্টীয় দীক্ষা গ্রহণে খ্রীষ্ট ধর্মালম্বী হওয়ায় গারো'রা খ্রীষ্ট রাজার মহাপর্ব ওয়ানগালা পালন করে আসছে। গারোদের ১২(বার)জাতি গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের উৎপন্ন শস্যাদি যীশু খ্রীষ্ট রাজাকে উৎসর্গ করছেন। খ্রীষ্টান ধর্মালম্বী হওয়ায় শ্রীমঙ্গল কাথলিক মিশনের প্রধান পাল পুরোহিত ফাঃ ডঃ জেমস শ্যামল গমেজ, সিএসসি গারোদের প্রধান " খামাল" হিসেবে মাথার কুতুব ও উত্তরীয় প্রদানে দায়িত্ব পালন করেন। মৌলভীবাজার জেলা শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৫ নং কালাপুর ইউনিয়ন মাজদিহি চা বাগান'র ফাঁড়ি বাগান ফুলছড়া গারো লাইনে ১লা ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ওয়ানগালা উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা,কমলগন্জ উপজেলা ও হবিগঞ্জ জেলা চুনারুঘাট উপজেলায় বসবাসরত গারো জনগোষ্ঠী পরিবার সদস্যরা একত্রে মিলিত হন। গারো জনগোষ্ঠী র নিজস্ব ভাষায় নাচ গান,খাওয়া দাওয়া, পোশাক, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন পালন ধারাবাহিকতায় অতিথিগণকে বরণ শুভেচ্ছা জ্ঞাপন ও প্রার্থনা সভা করেন।খ্রীষ্ট রাজার মহাপর্ব ওয়ানগালা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব সামুয়েল হাজং বলেন আমরা প্রতিবছর ওয়ানগালা উৎসব আয়োজন করে থাকি। তিনি বলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব ইসলাম উদ্দিন মহোদয় শ্রীমঙ্গলে যোগদানে ১ম দিনে ওয়ানগালা উদযাপন ডাকে প্রধান অতিথি উপস্থিত হয়েছেন এজন্য আমরা অত্যন্ত আনন্দিত খুশি হয়েছি। আসলেই " মিশি শালজং" খ্রীষ্ট রাজার আর্শিবাদ। তিনি আরও বলেন আমাদের গারো সমাজে নানান বিষয়ে শ্রীমঙ্গল প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে সর্বদা সহযোগিতা কামনা করেছেন গারো'দের প্রধান( খামাল), সভাপতি ও শ্রীমঙ্গল কাথলিক মিশন প্রধান পাল পুরোহিত ফাঃ ডঃ জেমস শ্যামল গমেজ, সিএসসি বলেন গারো ভাইবোনদের ওয়ানগালা উৎসব খ্রীষ্ট রাজার মহাপর্ব পালনের মাধ্যমের ওয়ানগালা উৎসব আয়োজন করেছি। আমরা সবাই খ্রীষ্ট রাজার রাজত্বে প্রেম,ভালবাসা ও সৌহার্দবোধ নিয়ে জীবনযাপন করতে পারি। তিনি আরও বলেন খ্রীষ্ট রাজার আর্শীবাদে আমাদের সকলের,গারো সমাজ,পরিবারে ও বাংলাদেশের শান্তি বিরাজমানে শান্তি কামনা করছি।শ্রীমঙ্গলের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসলাম উদ্দিন বলেন আমি শ্রীমঙ্গলে ১ম এসেছি দেখেছি গারোদের ওয়ানগালা উৎসব। তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ভাষা,পোশাক পরিধান এর মাধ্যমে আমাদের বরণ,কুতুব পরিধান( মাথার মুকুট), ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। তিনি আরও বলেন গারোদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা ঐতিহ্য সংরক্ষনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা ও চেষ্টা করে যাব।ওয়ানগালায় জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য প্রীতম দাস, ফিনলে টি কোম্পানী ডিনস্টন ডিভিশন উপ- মহা ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির মজুমদার, ডানকান ব্রাদার্স চাতালি ডিভিশন ফুলছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক শাহারিয়া পারভেজ, ফিনলে টি কোম্পানী হরিণছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক বিকাশ সিনহাসহ বিভিন্ন এলাকা হতে আগত গ্রাম্য গারো মাতব্বর প্রধান ও গারো জনগোষ্ঠীর পরিবার সদস্য, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ নেতৃবৃন্দ ওয়ানগালা উৎসব দেখতে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন।