এ-সময় সাংবাদিকরা ভাতের প্যাকেটের জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রামে যান বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন হোয়াট ইজ্ সাংবাদিক? কেনো দাওয়াত দিতে হবে? দাওয়াত ছাড়া আসলে আসবে না আসলে নাই। এ বিব্রতকর অবস্থায় এমপি আশেক উল্লাহ রফিক অনেকটা অসহায়ের মতো দাড়িয়ে ছিলেন সেখানে। গত (২২ অক্টোবর) শনিবার মহেশখালী উপজেলা হলরুমে অনুষ্ঠিত হয় উপকূলীয় এলাকা মহেশখালীর লবণ চাষীদের সাথে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এর মতবিনিময় সভা। প্রোগ্রামের আয়োজক উপজেলা প্রশাসন। উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় এমপি, মেয়র, জেলা আ.লীগের নেতৃবৃন্দ ও বিসিকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। অবহেলিত লবণ চাষীদের নিয়ে এত বড় আয়োজন অথচ এ বিষয়ে কিছুই জানেন না উপজেলার সাংবাদিকরা। রহস্যজনক কারণে ইনভাইট করা হয়নি কাউকে। যথারীতি প্রোগ্রাম শেষ হলো বিকেল ৩টার দিকে।
প্রোগ্রাম শেষে বাহিরে অপেক্ষারত আছে সাংবাদিকরা। কী হয়েছে হলরুমে? কেনো হয়েছে? এ যাবতীয় জিজ্ঞেসাসহ নানা তথ্য জানতে হলরুম থেকে বের হওয়া বিসিক কর্মকর্তার কাছে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্ন। তবে আপত্তিটা ইউএনও ইয়াছিনের। স্থানীয় এমপি ও জেলা আ.লীগের নেতৃবৃন্দের সামনেই সাংবাদিকদের অবজ্ঞা করে বিসিক কর্মকর্তাকে গাড়িতে তুলে চলে গেলেন ইউএনও। রীতিমতো সাংবাদিকদের অপমান করায় সেখানেই দুঃখ প্রকাশ করেন এমপি আশেক উল্লাহ রফিক। অল্পকিছু সময় পর ফের উপজেলা হলরুমের সামনেই ফিরে আসে ইউএনও। এ সময় এমপি আশেক উল্লাহ রফিক ইউএনও ইয়াছিনকে সাংবাদিকদের সাথে সমন্বয় করে সামনের প্রোগ্রাম আয়োজন করার পরামর্শ দিলে হঠাৎ মুখের ওপর ইউএনও বলে উঠেন হোয়াট ইজ্ সাংবাদিক? কেনো দাওয়াত দিতে হবে? দাওয়াত ছাড়া আসলে আসবে না আসলে নাই। এমপিকে পাল্টা প্রশ্ন করায় অনেকটা অসহায়ের মতো দাড়িয়ে ছিলেন তিনি।
এ নিয়ে চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে মহেশখালীসহ কক্সবাজার জেলার সকল সাংবাদিক। এ ঘটনার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউএনও ইয়াছিনকে নিয়ে নানা বিতর্কিত পোস্ট করছেন অনেকে। পরদিন এ অপ্রত্যাশিত আচরণের প্রতিবাদে (২৩ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা সদরে সমবেত হয় মহেশখালীর কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ। মহেশখালীর সাংবাদিকদের নিয়ে ইউএনওর এমন অপ্রত্যাশিত আচরণের প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিকরা। উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশের সভাপতি, মহেশখালী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের প্রতিনিধি মাহবুব রোকন বলেন, ইউএনও ইয়াছিন আসার পর থেকেই সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গণমাধ্যম থেকে আড়াল করে রাখছেন। রহস্যজনক কারণে গত পরশু বিসিকের প্রোগ্রামটিও সাংবাদিকদের না জানিয়েই শেষ করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা তথ্য নিতে উপজেলা হলরুমের সামনে গেলে ইউএনও ইয়াছিন সাংবাদিকতা পেশা ও সাংবাদিকদের নিয়ে নানা আপত্তিজনক মন্তব্য করেছেন।
আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। দৈনিক যুগান্তরের প্রতিনিধি ও মহেশখালী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুব রোকনের সভাপতিত্বে এবং মহেশখালী উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আ.ন.ম হাসানের সঞ্চালনায়, অনুষ্ঠিত হয় সাংবাদিক সমাবেশ। উক্ত সমাবেশে সাংবাদিক নেতা দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিনিধি ও মহেশখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল বশর পারভেজ, দৈনিক সকাল বেলার জেলা প্রতিনিধি ও মহেশখালী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ ইউনুস, দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিনিধি মহেশখালী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন চার দফা দাবী উত্থাপন করেন। দাবী গুলো হলো- চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ইউএনওকে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের যাবতীয় ইতিবাচক নিউজ বর্জন করা হবে,( ২৫ অক্টোবর) সর্বস্তরের সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের সমন্বয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে, তারপর (২৭ অক্টোবর) কক্সবাজার জেলা সদরে মানববন্ধনের পর জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
বিতর্কের পর বিতর্ক মোহাম্মদ ইয়াছিনের পূর্বের কর্মস্থল খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে থাকা অবস্থায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আনায় এক দিন মজুর শ্রমিককে ঘটনা সাজিয়ে জেলে পুরে দেন এ ইউএনও। একই উপজেলায় যেখানে স্বাভাবিকভাবে সরকারি ঘর পাওয়া দুষ্কর সেখানে একই ব্যক্তির দুই স্ত্রীর দুজনকেই মুজিবর্ষের ঘর দিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন তিনি ৷ পূর্বের কর্মস্থল ত্যাগ করার সময় নাটকীয় মানববন্ধন করিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন ইউএনও ইয়াছিন।মহেশখালীতে এসেও থেমে নেই তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। সবশেষে সাংবাদিকদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ আচরণ করার মাধ্যমে ফের বিতর্কিত হন তিনি। এতেই থেমে নেই এ বিতর্কিত ইউএনও। গত (২৬ মার্চ) নিউজ সংক্রান্ত বিষয়ে তার ব্যবহৃত সরকারি নাম্বারে ফোন করে ভাই সম্বোধন করে বক্তব্য নিতে চাওয়ায় দৈনিক আমার সংবাদের প্রতিনিধি ফুয়াদ মোহাম্মদ সবুজের ওপর ক্ষেপেছিলেন তিনি। ঐ সময় সাংবাদিক সবুজ উপজেলা প্রশাসনের সকল সংবাদ বর্জনের ঘোষণা দেয়।