গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এক আদিবাসী সাঁওতাল নারীকে মারধরের পর তার বসতবাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এক আদিবাসী সাঁওতাল নারীকে মারধরের পর তার বসতবাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। গত কাল শুক্রবার (৪ জানুয়ারি) রাতে  দিকে উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকার বরট্ট গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত ফিলোমিনা হাসদা (৫৫) বর্তমানে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে বলে জানান পরিবার সদস্যরা। জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জের রাজাহার ইউনিয়নের বরট্ট (আদিবাসীপাড়া) গ্রামের জোয়াস মুরমুর পৈত্রিক ১৬ শতাংশ জমি পতিত অবস্থায় ছিল। সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে গতকাল শুক্রবার সকালে দিকে  চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম লোকজন নিয়ে জমিতে মাটি ভরাট করছিলেন। মাটি ভরাট করা দেখে গ্রামের কয়েকজন আদিবাসী যুবক মাটি কাটতে বাধা দেন। এ সময় চেয়ারম্যানের সামনেই তার লোকজন নিকোলাস মুরমুকে মারধর করে তাড়িয়ে দেন। চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামে শাখাহার ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় যুবক ব্রিটিশ সরেণ বলেন,আমরা কিছু দূরে আলু খেতে কাজ করছিলাম। এ সময় খালাতো ভাইকে মারধরের কথা শুনে প্রতিবাদ করতে গেলে চেয়ারম্যান আমাকে লাঠি দিয়ে মারতে আসেন। এ সময় আমার মা চেয়ারম্যানের লাঠি ধরতে গেলে চেয়ারম্যান তার কানে উপর্যপুরি থাপ্পড় দেন। এতে মা মাটিতে পরে যান এবং তার কান দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। এরপর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আহত ফিলোমিনা হাসদাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। এখন সেখানে ভর্তি আছেন তিনি। ব্রিটিশ সরেন আরও বলেন,পরে বেলা ১২টার দিকে আবার আলু খেতে গেলে চেয়ারম্যানের অনুসারী ২০ থেকে ২৫ জন লোক আমাকে বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করে এবং হুমকি দিয়ে চলে যায়। রাতে মায়ের চিকিৎসার জন্য বগুড়ায় চলে যাই। রাত ১১টার দিকে জানতে পাই চেয়ারম্যানের লোকজন আমাদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। তবে তাদের একটি বসতঘর পুড়ে গেছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, স্থানীয় আব্দুল মালেক নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০০১ সালে ১৬ শতক জমি কিনেছিলেন। ওই জমিতে মাটি ভরাট করতে গেলে ব্রিটিশ সরেনসহ কয়েকজন সাঁওতাল যুবক বাধা দেয়। আমার লোকজন তাদের তাড়িয়ে দেয়। জমির দলিলসহ রেকর্ডপত্র আমার নামে আছে। আমি ব্রিটিশ সরেনের মাকে মারধর করিনি। তারা মিথ্যা অভিযোগ করছেন বলে জানান তিনি। এঘটনায় পুলিশ প্রশাসন আজ দুপুরে গাইবান্ধা সহকারী পুলিশ সুপার সি-সার্কেল এবিএম রশিদুল বারী ও পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত ইকবাল পাশা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম বলেন, শুনেছি, জমি-জমার বিষয় নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। আদিবাসী নারীকে কানে থাপ্পড় দিয়েছেন (চেয়ারম্যান)। এ ঘটনায় রাজাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম কে অভিযুক্ত করে গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।