গতকাল মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনটি একই দিনে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেহেতু, মোছা. সুলতানা পারভীন, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (সাবেক জেলা প্রশাসক, কুড়িগ্রাম) ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ সিনিয়র দায়রা জজ আদালত, কুড়িগ্রামে হাজির হয়ে ফৌজদারি মিস মামলা নম্বর-১৩৪৫ /২০২৫; জি আর ৮৩/২০২০ (কুড়িগ্রাম)-এ জামিন প্রার্থনা করলে বিজ্ঞ আদালত শুনানি শেষে তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।
যেহেতু, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৩৯ (২) ধারা অনুযায়ী সরকার তাঁকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা প্রয়োজন ও সমীচীন মনে করেন। সেহেতু, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৩৯ (২) ধারা অনুযায়ী মোছা. সুলতানা পারভীন, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালে তিনি বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে কুড়িগ্রামের সাবেক এই ডিসি সাংবাদিক আরিফের করা মামলায় গত ৩ আগস্ট হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন। হাইকোর্ট তাঁকে জামিন না দিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
এরপর সুলতানা পারভীন ২১ আগস্ট কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন। আদালত ২ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন। সেদিন শুনানি শেষে আদালত আসামি সুলতানা পারভীনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। ৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট আসামির ছয় মাসের জামিন মঞ্জুর করেন। তবে আজ বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত আসামি সুলতানা পারভীন কুড়িগ্রাম কারাগারেই বন্দী রয়েছেন বলে কারাগার সূত্রে জানা গেছে।
কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারের জেলার এ জি মাহমুদ আজ রাত পৌনে ৮টায় বলেন, ‘সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন এখনো কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তাঁর জামিন আদেশ-সংক্রান্ত কাগজ এখনো (বুধবার রাত পর্যন্ত) কারাগারে পৌঁছায়নি।’
কুড়িগ্রাম শহরের একটি সরকারি পুকুর সংস্কার করে ডিসির নামে (সুলতানা সরোবর) নামকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ দিবাগত রাতে সাংবাদিক আরিফকে তাঁর বসতবাড়ি ও বসতঘরের গেট ভেঙে তুলে নিয়ে যান, জেলা প্রশাসনের তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
তাঁকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার উদ্দেশে জেলা শহরের পূর্বে ধরলা নদীর তীরে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ফিরিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে বিবস্ত্র করে পেটানো হয়। এরপর মাদক রাখার অভিযোগ দেখিয়ে মধ্যরাতেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে এক বছরের কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। এ নিয়ে সারা দেশে প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ শুরু হলে একদিন পর সাংবাদিক আরিফকে জামিন দেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
জামিনে মুক্তি পেয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানায় তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীন, তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে এজাহার করেন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে কুড়িগ্রাম সদর থানা-পুলিশ।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করে ঘটনার পাঁচ বছর পর আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। চার্জশিটে সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন, তৎকালীন আরডিসি নাজিম উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা এবং এস এম রাহাতুল ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরপর জামিন নিতে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন সুলতানা পারভীন।