ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ মোট ২২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও গেজেট সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানা গেছে, অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সরকারের সাবেক সাত মন্ত্রী, দুই সংসদ সদস্য, এক সাবেক বিচারপতি, সাবেক সচিব, আইজিপি, সেনা কর্মকর্তা, বেতারকর্মী ও উচ্চপদস্থ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা। জামুকার ৯৫তম সভায় গৃহীত এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে বিশেষ সুবিধা নেওয়া এসব প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিশেষ করে আলোচনায় রয়েছেন তিন মেয়াদে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী থাকা আ ক ম মোজাম্মেল হক। অভিযোগ রয়েছে, তাঁর প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ সংক্রান্ত কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। এমনকি ভারতে প্রশিক্ষণ নেওয়া ৫১ হাজার মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়ও তাঁর নাম পাওয়া যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, ১৯৮৬ সালে প্রণীত লাল মুক্তিবার্তার ভলিউমে তাঁর নাম পরবর্তীতে জালিয়াতির মাধ্যমে যোগ করা হয়েছে।
এ ছাড়া আলোচনার কেন্দ্রে থাকা অন্যদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান, টিপু মুনশি, সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মোজাম্মেল হোসেন ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব ইসরাত চৌধুরী জানান, সরকার ইতোমধ্যে ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ শনাক্ত করতে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তথ্য প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট ফরম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
আদালতেও এই বিষয়ে একটি রিট মামলা (নং ১৫১৪২/২০২৩) চলছে, যা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে জাতির। রিটটি করেছেন জামুকার সদস্য খ ম আমীর আলী, যেখানে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা শুধু সরকারের জন্য নয়, গোটা জাতির জন্যই একটি চেতনার প্রশ্ন। মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা রক্ষায় এই তদন্ত একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে।