কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ সেবা গ্রহীতাদের। সরকারি এই গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরটি বর্তমানে যেন দালাল ও দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। নিরীহ জনগণ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং লক্ষ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 
অভিযোগ রয়েছে, সাব-রেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন দলিল লেখকদের সহযোগীতায় সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে লক্ষ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত নিয়ে থাকেন। সরকারি নীতিমালায় হেবা দলিলে ৭৮০ টাকা এবং কবলা দলিলে ৩৮০ টাকা ফিস সরকার নির্ধারিত থাকলেও, দৌলতপুর অফিসে নির্ধারিত ফিস বাদেও হেবা দলিলের জন্য ৩২২০ টাকা এবং কবলা দলিলের জন্য ৩১২০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও সরকারি ভাবে মৌজা মূল্যের বেশি মূল্যে ২ পার্সেন্ট, জমির শ্রেণী না থাকলে ২ পার্সেন্ট, বন্টন নামা দলিলে ১ পার্সেন্ট সহ শ্রেণী বাড়ী হলে ১০ হাজার টাকা, এক দলিলে দুটি মৌজা হলে ২০ হাজার টাকা, ওয়ারিশ সূত্রে ২০ হাজার টাকা, জাতীয় পরিচয় পত্রে নামে সমস্যা থাকলে ৭ হাজার টাকা নির্ধারণ করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন সাব-রেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন সরকার। তা-ছড়াও সাব-রেজিস্ট্রারের ব্যক্তিগত কক্ষে (খাস কামরা) দলিল করলে সর্বনিম্ন দলিল প্রতি দেয়া লাগে অতিরিক্ত ৫০০০ টাকা। যা মোট দলিলের ৮০ শতাংশ দলিল লেখকদের জিম্মি করে রেজিস্ট্রি করানো হয় খাস কামরায়। এছাড়াও পে-অর্ডারের নামে চলছে আরেক দফা হরিলুট। এ যেনো রাম-রাজত্বে পরিণত হয়েছে সরকারি এ দপ্তরটি।
এনিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হাই সিদ্দিকী ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হয়নি বরং আরো বেপরোয়া ভাবে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজি চলছে এমন অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, হোগলবাড়ীয়া মৌজায় আমার একটি ৫ কোটি টাকা মূল্যের দলিলে সাব-রেজিস্ট্রার ১৫ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত নিয়ে রেজিস্ট্রির কাজ সম্পন্ন করেছে। আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমার ৩৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি দলিল রেজিস্ট্রি করতে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরজমিনে দেখা গেছে প্রতিটা সেবা গ্রহীতারে একই অভিযোগ।
এনিয়ে দৌলতপুর থানা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা এক দলীয় প্রোগ্রামে ও মাসিক আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ের বক্তব্যে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মন্টি সরকার, সাবেক থানা বিএনপির সদস্য সচিব শহিদ সরকার মঙ্গল ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মুকুল শাহ-সহ একাধিক ভুক্তভোগী রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতির কথা তুলে ধরে তাদের ফেসবুক পেইজে স্ট্যাটাস দেয়।
নিয়ম অনুযায়ী সকাল ১০টায় রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও সাব-রেজিস্ট্রার নিয়মিত দুপুর ১টার পর অফিসে আসেন এবং ২টার পর রেজিস্ট্রির কাজ শুরু করেন। অনেক সময় বিকেল ৪ টাও বেজে যাই রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শুরু করতে, আবার ৫টার পর লেট ফি বাবদ আরো ২ হাজার টাকা গুনতে সেবা গ্রহীতাদের।
এ বিষয়ে দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন সরকার তার বিরুদ্ধে আনিত দুর্নীতির সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি কোনো ধরনের দুর্নীতি বা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই। বরং যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, তারাই প্রকৃতপক্ষে এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।”
কারা জড়িত জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দলিল লেখক ও স্থানীয় কিছু দালালের যোগসাজশে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকে, আমি কোন দুর্নীতি করি নাই।”
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, “সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতির অভিযোগ এত বেশি শুনতে হচ্ছে যে, আমি সত্যিই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। আগামী দিনে আমি নিজেই সরাসরি উপস্থিত থেকে সব ধরনের দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেব।”
এদিকে স্থানীয় সচেতন মহল দৌলতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।