দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ফরিদপুরের সালথা উপজেলাধীন বিভাগদী শহীদস্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে পুরো ক্যাম্পাসকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় কলেজের খেলার মাঠে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা ও ক্রীড়া পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর শপথ বাক্য পাঠ, বিএনসিসি ক্যাডেটদের কুচকাওয়াজ প্রদর্শন এবং মশাল প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান।
প্রতিষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. তারিকুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিছুর রহমান বালী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অকো-টেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নূরুল হুদা (রুবেল)।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, বিভাগদী শহীদস্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের দাতা সদস্য আবু রাহাত খান সিরাজ, সাবেক বিদ্যোৎসাহী সদস্য মো. মজিবুল হক, বিভাগদী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি শাহিনুর রহমান, কোন্দারদিয়া ইসলামি দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. আক্কাস আলী, সাড়ুকদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু জয়ন্ত কুমার, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. কামরুল ইসলাম সহ অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।
অনুষ্ঠানটি ছিল আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে। শিক্ষার্থীরা নানা ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিটি ইভেন্টে ছিল তুমুল প্রতিযোগিতা, যা অতিথি, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি করে।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে আবু সাঈদ খান বলেন, এদেশের মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকার সম্মান ধরে রাখতে লেখা পড়ার মাধ্যমে আলো ছড়াতে হবে। শিক্ষাকে সংকীর্ণ দলাদলির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। সব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি ও স্থানীয় প্রণোদনা দিয়ে উৎসাহিত করতে হবে। দেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে এর বিকল্প নেই।
আবু সাঈদ খান বলেন, জগৎ বিক্ষাত বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু তিনি জেলা স্কুলে পড়েন নাই। তিনি ভাংগা কুলা স্কুল অর্থাৎ তিনি স্বদেশী স্কুলে পড়েছিলেন।
সেখান থেকেই তিনি জ্ঞানী হিসাবে নিজেকে যোগ্য একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে ছিলেন। তাই আমরাও প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে, গ্রামীণ পরিবেশে এই কলেজ করেছি। একদিন আসতে পারে, এই কলেজটাকে এমনভাবে গড়তে চাই যেন শহর থেকে বাবা-মা তাদের সন্তানকে এই কলেজে পড়াশোনা করতে পাঠাবেন। আমরা চাই গ্রাম, মানুষ ও প্রকৃতির ধারণা পাবেন তারা। এখানে মানুষের মত মানুষ হয়ে গড়ে উঠবেন তারা।
আবু সাঈদ খান আরো বলেন, আমরা আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে মিলিয়ে যাত্রা শুরু করেছি। বিভাগদী শহিদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প ছিল। এখান থেকেই যুদ্ধ করার জন্য সালাহউদ্দিনরা ফরিদপুর গিয়ে একসঙ্গে ৭ জন শহিদ হন। তাদের স্মৃতিকে সমুন্নত রাখতে নাম করেছি শহিদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়। শুধুমাত্র তারাই নন, ৩০ লক্ষ শহিদ মা-বোন যারা স্বাধীনতার জন্য দেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন তাদের স্মৃতিকে আমরা সমুন্নত রাখতে চাই। এরপর গণতন্ত্র আনতে গত জুলাই-আগষ্টের গণঅভ্যুথানে যারা রক্ত ঝরিয়েছেন এবং শহিদ হয়েছেন। তাদেরকেও আমরা এই শহীদস্মৃতিতে দেখতে পাই। অর্থাৎ দেশকে ভালোবেসে যারা জীবন দান করেছেন, কিম্বা আগামীতে দেশের প্রয়োজনে জীবন দান করবেন তাদের প্রতীক হয়েই এই কলেজটি টিকে থাকবে, এই বিশ্বাস আমরা করতে চাই।
অকো-টেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান বলেন, নতুন প্রজন্মকে দেশ ও জাতীয় চেতনার সাথে সম্পৃক্ত করতে তাদেরকে পরিপূর্ণভাবে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার কোর্স কারিকুলাম চালু করতে হবে । লেখাপড়ায় শুধু ভালো রেজাল্ট করলে হবে না। লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হতে হবে।
ইউএনও মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, শুধুমাত্র লেখাপড়ার মাধ্যমে নয়, ক্রীড়া ও সংস্কৃতির মাধ্যমে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটানো অত্যন্ত জরুরি। এসব কার্যক্রম তাদের মেধা এবং সৃজনশীলতার বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে বছরের শুধু একদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে হবে না। প্রতিনিয়ত এই ধরনের আয়োজন করতে হবে। যেখানে প্রাণের স্পন্দন হবে তারুণ্যের জয়গান। শিক্ষার্থীরা আনন্দ নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবে এবং এই আনন্দ তাদের জীবনে ছড়িয়ে পড়বে। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যদি ক্রিয়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন না হয়, তাহলে আমাদের তরুণরা অপসংস্কৃতি ও মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়ে বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আমার স্বল্প অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি গ্রাম গঞ্জের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের শিক্ষার্থীদের জীবনে কোন প্রভাব ফেলতে না পারে, তাহলে আমাদের দেশে কাঙ্ক্ষিত সমাজ সেটা গঠন করতে ব্যর্থ হব। সালথা উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তারা বিভাগদী শহিদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের কথা আমার কাছে প্রতিনিয়ত জিজ্ঞাসা করেন, প্রতিষ্ঠান কেমন চলছে। এই অজপাড়া গায়ে এত সুন্দর একটা প্রতিষ্ঠান করার জন্য সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খানকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই। সালথা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই কলেজের প্রতি সব সময় সুদৃষ্টি দেওয়া হবে।
এরপর সাংস্কৃতিক পর্বে অনুষ্ঠিত হয় নাচ, গান সহ বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।