পৈত্রিক ৯২ শতাংশ জমি দলিল করে লিখে নেওয়ার পর প্রায় ৯ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্বজনদের বিরুদ্ধে। আত্মসাৎকৃত টাকা এবং পৈত্রিক জমি ফিরে পাওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে প্রতারণার শিকার ভূক্তভোগী দিন মজুর সঞ্জয় ভক্ত। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সঞ্জয়ের মা সীতা রানী ভক্ত বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার চরণী পত্তাশী গ্রামের চিত্ত রঞ্জন ভক্ত, তার ছেলে শৈলেন্দ্র নাথ ভক্ত এবং রিপন ভক্তের বিরুদ্ধে এ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন সঞ্জয়। গতকাল রোববার দুপুরে পিরোজপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সঞ্জয় অভিযোগ করেন, তার প্যারালাইজড দাদু ক্ষিরোদ চন্দ্র ভক্তকে পৈত্রিক ভিটা থেকে তাড়িয়ে দেয় তার আপন ভাই শরৎচন্দ্র ভক্ত।
এরপর সে তার সন্তান নিরঞ্জন ভক্তকে নিয়ে পার্শবর্তী বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামে আশ্রয় নেয়। এ দীর্ঘ সময়ে সঞ্জয়ের বাবা নিরঞ্জন ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে এবং দাদু বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। বাড়ি থেকে তাদেরকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর একবার সঞ্জয়ের মা সীতা রানী ভক্ত কিছু টাকার জন্য ওই বাড়িতে গেলে শরৎচন্দ্র ভক্তের ছেলে চিত্ত রঞ্জন ভক্ত তাকেও বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে দুই বছর পূর্বে চিত্ত রঞ্জন তার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে সঞ্জয়ের বাড়িতে গিয়ে জানায় যে, চিত্ত তাদেরকে কিছু টাকা দিতে চায়। তখন পৈত্রিক জমির বিষয়ে জানতে চাইলে চিত্তের বড় ছেলে শৈলেন্দ্র নাথ ভক্ত সঞ্জয়কে জানায় যে, সে ১০-১২ কাঠা জমি পেতে পারে এবং এজন্য তারা তাকে সর্বসাকূল্যে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়।
এর আগে শৈলেন্দ্র নাথ ভক্ত এবং তার ভাই রিপন ভক্ত একই এলাকার হাজেরা নামের এক নারীর কাছে ৩৩ শতাংশ জমি ৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করবে চুক্তি করে ১ লক্ষ টাকা নগদ গ্রহন করে। পরবর্তীতে গত ১০ জুলাই পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ১০৭১ নং দলিলের মাধ্যমে সঞ্জয়ের নামে থাকা জমি থেকে হাজেরাকে ৩৬ শতাংশ জমি দলিল করে দেওয়া হয় যার মূল্য ৩ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা। একই তারিখে ১০৭২ নং দলিলের মাধ্যমে সঞ্জয়ের নামে থাকা অবশিষ্ট বাড়ির ২৮ শতাংশ এবং নাল জমি ২৮ শতাংশ মোট ৫৬ শতাংশ জমি চিত্ত রঞ্জনের ছেলে রিপন ভক্ত, শৈলেন্দ্র নাথ ভক্তের ছেলে শোভন ভক্ত (চিত্ত রঞ্জন ভক্তের নাতি) এবং মৃত স্বপন ভক্তের ছেলে শুভ ভক্ত (চিত্ত রঞ্জন ভক্তের নাতি) নামে দলিল করে নিয়ে যায় যার মূল্য ৬ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা। এরপর ৯২ শতাংশ জমির মূল্য হিসেবে সঞ্জয়কে মাত্র ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করে শৈলেন্দ্র নাথ ভক্ত।
পরবর্তীতে বাকী টাকা না দিয়ে ইন্দুরকানী থেকে সটকে পড়ে শৈলেন্দ্র নাথ এবং তার সাথে থাকা লোকজন। এর আগে হাজেরাকে সঞ্জয়ের জমি থেকে দলিল করে দিতে চাইলে সে আপত্তি জানায়। তখন সব জমিই একই দাগের জানিয়ে শৈলেন্দ্র নাথ বলেন যে, এতে সমস্যার কিছুই নাই। পরবর্তীতে সে তার পরিশোধকৃত ৩৬ শতাংশ জমির মূল্য ৩ লক্ষ ৭২ টাকা সঞ্জয়কে দিতে বললে তারা জানায় যে, একটু পরেই সঞ্জয়কে তারা পুরো টাকা দিয়ে দিচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে সঞ্জয়ের মা সীতা রানী ভক্ত, সঞ্জয়ের ৩৬ শতাংশ জমির ক্রেতা হাজেরা এবং স্থানীয় মোজাম্মেল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন সঞ্জয়ের মা। তিনি জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর ৪ মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটিয়েছেন। এরপরও সে তার স্বামীর সম্পত্তি থেকে সন্তানদের জন্য সামান্যতম কোন সুবিধা পায় নি।
এত বছর তাদের সম্পত্তি ভোগ দখল করার পরও, প্রতারণা করে তার চাচাতো ভাসুর এবং তার ছেলেরা তার সন্তানের জমি কৌশলে লিখে নিয়ে ৮ লক্ষ ৭৩ টাকা আত্মসাৎ করেছে। তিনি আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরত পাওয়ার জোর দাবি জানায়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হাজেরা জনায়, তাকে এক জনের জমি দেওয়ার কথা বলে কৌশলে অন্যের জমি লিখে দিয়েছে শৈলেন্দ্র নাথ। এমনকি সে সঞ্জয়কে তার ক্রয়কৃত জমির মূল্য হিসেবে যে টাকা দিয়েছে তাও আত্মসাৎ করেছে শৈলেন। তবে অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত চিত্ত রঞ্জন ভক্ত এবং তার ছেলে শৈলেন্দ্র নাথ ভক্ত ও রিপন ভক্তের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।