ঢাকা শহর থেকে মাত্র ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত হবিগঞ্জ সিলেট বিভাগের হাওর, পাহাড়, রাবার বাগান, চা বাগান, সংরক্ষিত বনাঞ্চল বেষ্টিত প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত একটি জেলা, এই জেলায় ৫৪টি চা বাগান রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ তথা এশিয়ার বৃহত্তম সুরমা চা বাগানের অবস্থান, এছাড়া সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমা-কালেঙ্গা জাতীয় উদ্যান, শাহজী বাজার রাবার বাগান, ফ্রুট ভ্যালী, মাধবপুর ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শিল্প এলাকা এই এলাকার দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, হবিগঞ্জের পাহাড়গুলোর গড় উচ্চতা ৬৭ মিটার, ১৭৯৫ হেক্টর আয়তনের সুরমা চা বাগানকে বলা হয় বাংলাদেশ তথা এশিয়ার বৃহত্তম চা বাগান, ৭০০ একর জায়গা জুড়ে বিলুপ্ত প্রজাতির জীববৈচিত্র্য ভরপুর সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, সুন্দরবনের পরে রেমা- কালেঙ্গা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন।

তেলিয়াপাড়ায় চা বাগান ও সুরমা চা বাগান: মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত তেলিয়াপাড়ায় চা বাগান এর অবস্থান মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়ায়, এখানে স্থাপিত হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সেনা সদরদপ্তর, জেনারেল ওসমানীর নেতৃত্ব একদল মুক্তিকামী মানুষ এখানেই দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য শপথ নেয়, এখানেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের  স্মৃতিস্তম্ভ, যার সামনে রয়েছে একটি সুন্দর স্বচ্ছ পানির লেক। সুরমা চা বাগানকে বলা হয় বাংলাদেশ তথা এশিয়ার বৃহত্তম চা বাগান, তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ঠিক পাশেই পুরাতন সিলেট রোডের দুই ধারে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ১৮০৩ হেক্টর সমতল ভূমি থেকে শুরু করে ছোট ছোট পাহাড়ি টিলার উপর বিশাল আয়তনের এই চা বাগানের অবস্থান, চারদিকে সবুজের সমারোহ মনকে ভরিয়ে দেয় অনাবিল প্রশান্তিতে। তেলিয়াপাড়া ও সুরমা চা বাগানে যেতে হলে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর থেকে ইজিবাইক ও সিএনজি যোগে যাওয়া যায়।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও রেমা-কালেঙ্গা জাতীয় উদ্দ্যান : সুরমা চা বাগান যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকেই শুরু হয়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, চুনারুঘাট উপজেলার পুরাতন সিলেট রোডের দুই ধারে প্রায় ৭০০ একর জায়গা জুড়ে বিলুপ্ত প্রজাতির জীববৈচিত্র্য ভরপুর এই উদ্যানটি ভারত সিমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত, এর পূর্ব নাম ছিলো রঘুনন্দন হিল রিজার্ভ ফরেস্ট, এই বনের ভিতর ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর ২৪টি পরিবারের বসবাস রয়েছে, এই উদ্দ্যানের পাশেই পিকনিক স্পট রয়েছে যেখানে নিদিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে পিকনিক করা যায়, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের শেষ প্রান্তে বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন চন্ডিছড়া চা বাগান বা ডানকান ব্রাদার্স এর অনিন্দ্য সুন্দর  চা বাগানের অবস্থান।

চুনারুঘাট উপজেলার রশীদপুর, ছনবাড়ী, রেমা ও কালেঙ্গার  বিস্তৃত এলাকায় এই বনের অবস্থান, সুন্দরবনের পরে রেমা-কালেঙ্গা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন, এর আয়তন ১৭৯৫ হেক্টর, রেমা-কালেঙ্গা জাতীয় উদ্দ্যানকে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও পশুপাখি অভয়ারন্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে, এই বনের ভিতরে উড়ং, তেলেগু, সাওতাল ও ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে, রেমা-কালেঙ্গা জাতীয় উদ্দ্যান প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় তাই ভালো থাকার বা খাওয়ার হোটেল নাই তবে বন বিভাগ কতৃক বনের ভীতরে নির্মিত রিসোর্টে সাত থেকে আটজনের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা আছে সেক্ষেত্রে আগে কতৃপক্ষকে ফোন করতে হয়, এছাড়াও বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে বনের অভ্যন্তরে নির্জন পরিবেশে নিজ ব্যবস্থাপনায় ক্যাম্প করা যায়, রেমা-কালেঙ্গা জাতীয় উদ্যানে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থের বিনিময়ে দক্ষ গাইডদের সাহায্য নিয়ে টেইল করা যায়, এই বনে আসতে হলে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ অথবা মাধবপুর থেকে সিএনজি অথবা প্রথমে চুনারুঘাট আসতে হবে তারপর চুনারুঘাট থেকে সিএনজি যোগে রেমা-কালেঙ্গা যেতে হবে ।

শাহজীবাজার রাবার বাগান, ফ্রুটস ভ্যালী ও ওলিপুর শিল্প এলাকা- প্রায় ২১০০ একর বিশাল এলাকা জুড়ে পাহাড়ের টিলায় সবুজ স্নিগ্ধ শাহজীবাজার রাবার বাগান গড়ে উঠেছে, এখানে আসলে সত্যি মনটা জুড়িয়ে যায়, রাবার বাগান থেকে সামান্য দক্ষিণে হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ডের মধ্যে প্রায় ১৩০ প্রজাতির ফলজ গাছের সমন্বয়ে ফ্রুটস ভ্যালীটি গড়ে তোলা হয়েছে যেখানে গ্যাস ফিল্ড কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করা যায় তার পাশেই ওলিপুর শিল্প এলাকার অবস্থান। ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে সারাদিনই বাস ও ট্রেন যোগে মাধবপুর ও শায়েস্তাগঞ্জ এ আসা যায়, মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ ও হবিগঞ্জে ভালো মানের বেশ কিছু খাওয়ার হোটেল আছে এছাড়ও বিজয়নগর উপজেলার শ্যামলীঘাট এলাকায় মহাসড়কের ধারে কিছু হোটেল আছে যেখানে স্বল্প মূল্য হাঁসের মাংস সহ বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।