কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকাগুলো এখন ভূট্টার সোনালি রঙে রাঙানো। উৎপাদন খরচ কম, লাভ বেশি, এবং বন্যা কিংবা খরার ভয় না হওয়ায় গত কয়েকবছর ধরে চরাঞ্চল এর চাষীরা ঝুঁকছেন  ভূট্টা চাষের দিকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এই সোনালি ফসল ভূট্টা।

কৃষক-কৃষাণিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে তাদের স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে।


কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলার মধ্যে এবারও মিঠামইন উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ভূট্টার ফলন হয়েছে। 

কালের বিবর্তনে ঘোড়াউথরা নদী হারিয়েছে তার আগের তেজ,কমেছে স্রোত, জেগে উঠেছে অসংখ্য চর, আর সেই চরেই শুরু হয়েছে চাষীদের জীবনের নতুন অধ্যায়।ভূট্টা চাষের মাধ্যমে তারা তাদের অবস্থার পরিবর্তন করছেন।

ভুট্টা সাধারণত একটি দানাদার খাদ্য শষ্য। গরু মোটাতাজাকরণ, ব্রয়লার মুরগীর খামার, মাছ চাষের জন্য স্থানীয়ভাবে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও দেশের ফিড মিলের মালিকেরা কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন আড়ত থেকে ভুট্টা কিনে নিয়ে যান।চাহিদা বেশি হওয়ায় তাই ভুট্টা বিক্রি করা নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তা করতে হয় না। এছাড়াও ভুট্টার পাতা গরুর খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টা গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।


মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের কৃষক মুসলিম মিয়া বলেন, ‘গত ৬/৭ বছর ধরে ভুট্টার চাষ করছি। এ বছর ৫ একর জমিতে ভুট্টা করেছি। এ বছর আগে ফসল কেটেছি। ৫ একরে প্রায় ৪৬০ মণের মতো ভুট্টা পেয়েছি । ফলন আলহামদুলিল্লাহ ভালো হওয়ায় লাভ ও ভালো হবে বলে তিনি আশাবাদী। 

তিনি আরো  বলেন, 'ভুট্টা বিক্রি করে আমাদের প্রায় অর্ধেকই লাভ এবং  পাতা কেটে গরুকে খাওয়াতেও পারি।এতে গরুর খাদ্যের ও সংকট দূর হয়।

এ বছর কিশোরগঞ্জে ১২ হাজার ১০০ হেক্টর জমি থেকে ১২ হাজার ২১০ টন ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১২ হাজার ২১০ হেক্টরে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। ফলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা।

ভুট্টা উৎপাদনে কৃষকদের বীজ নির্বাচন থেকে শুরু করে রোগবালাই দমনে সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন পরিচালক বলেন, 'বোরো ধান কর্তনের আরও আগেই ভুট্টা কর্তন করা সম্ভব হয়। বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কৃষক ভুট্টার দিকে ঝুঁকছে। আবার ভুট্টা থেকে লাভ অনেক বেশি হয়।'

ভুট্টা চাষের মাধ্যমে হাওরের কৃষকদের দিন পরিবর্তন হচ্ছে এবং দেখা দিচ্ছে সম্ভাবনার নতুন জোয়ার।  তবে এরই পাশাপাশি  বাজারজাতকরণে কৃষকের স্বার্থরক্ষায় কঠোর নজরদারি প্রয়োজন সংশ্লিষ্টদের।