স্থানীয় নেতা এবং কটেজ জোন নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের দ্বারা। কক্সবাজার শহরের ১২ নং ওয়ার্ড লাইট হাউজস্থল কলাতলীর কটেজ জোনে সেপটিক ট্যাংকে নেমে দুই শ্রমিকের মৃত্যুকে ঘিরে আলোচনা থামছে না। সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও রহস্যজনক ভূমিকার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন আশেপাশের লোকজন।

এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে গতকাল সোমবারও কটেজ জোনসহ বিভিন্ন স্তরে লোকজনের মাঝে মাতামাতি ছিলো। এই ঘটনায় অবৈধভাবে নির্মাণাধীন ওই ভবনের মালিকপক্ষ, কেয়ারটেকার সাইফুল ও কাজের মাঝি আবুলের চরম অবহেলা ও রহস্যজনক ভূমিকা ছিলো বলে দাবি করেছেন আশেপাশের লোকজন। মৃত্যুর পর থেকে নিহতদের স্বজনেরাও এই দাবি করে আসছিলেন। তাই এই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে মোটা অংকের মিশন বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যার পরিমাণ ১৭ লাখ টাকার মতো! তবে এর মধ্যে নিহতদের পরিবার পেয়েছে নাম মাত্র অর্থ। এই মিশন বাস্তবায়নের ব্যবহার করা হয়েছে এক শীর্ষ ছাত্রলীগ নেতাকে। সাথে ছিলেন ওই ভবনের কেয়ারটেকার সাইফুল। একাধিক অনুসন্ধানে এই তথ্য মিলেছে।

শুরু থেকেই এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয় এবং নানা অভিযোগ উঠে। এরই প্রেক্ষিতে বিস্তারিত জানতে অনুসন্ধানে নামে এই প্রতিবেদক। জানা গেছে, নির্মাণাধীন ওই ভবনটির মালিক সৌদি প্রবাসী মোস্তাক আহমদ। তার বাড়ি খরুলিয়া ঘাটপাড়া এলাকায়। এই ভবনটি নির্মাণে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেই। মূলত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করে রাতারাতি নির্মাণ করে যাচ্ছে। একইভাবে অনুমোদন না নিয়ে আশেপাশে আরো সাত-আটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। অনুমোদন না থাকায় যেনতেন ভাবে চালাচ্ছে নির্মাণ কাজ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, যে সেপটিক ট্যাংকে নেমে দুই শ্রমিক মারা গেছে সেটি দীর্ঘদিন বদ্ধ ছিলো এবং সেখানে বর্জ্যও অপসারণ করা হয়েছে। সে কারণে সেখানে গ্যাস উৎপন্ন হয়েছে। তারপরও ট্যাংকের ঢাকনা খুলে সাথে সাথে শ্রমিকদের সেখানে নামিয়ে দেন মাঝি মিস্ত্রি আবুল। গভীর এই ট্যাংকে সাথে সাথে আক্রান্ত হওয়ায় আর উপরে উঠতে পারেনি প্রথম জন। তারপরও তাকে উদ্ধারে জোর করে পর পর আরো দুইজনকে নামিয়ে দেন আবুল। 

পরে তাদের উদ্ধারেও গড়িমসি করা হয়েছে। ফলে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। তাই ঘটনার সাথে সাথে গা ঢাকা দেয় তারা। আড়ালে থেকে ঘটনা ধামাচাপা দিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। ভবনের মালিকের পারিবারিক এক সূত্র জানিয়েছে, ঘটনা ধামাচাপা দিতে সৌদি আরবে থাকা মালিক মোস্তাক আহামদের কাছে থেকে ২০লাখ টাকা প্রস্তাব করে কেয়ারটেকার সাইফুল। সাইফুল মালিককে জানায়, পুলিশ, সাংবাদিক ও নিহতদের পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট লোকজনকে এই টাকা দিতে হবে। ধামাচাপার পরিকল্পনা নিয়ে আগায় সাইফুল। তার জন্য সার্বক্ষণিক পরামর্শ নেয় এক সাংবাদিক, দুই থেকে তিনজন হোটেল ও কটেজ মালিক নেতার কাছে। সে মোতাবেক তাদের প্রথম চেষ্টা ছিলো ঘটনা গণমাধ্যমে না আসা; আসলেও ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা। এই জন্য দায়িত্ব দেয়া ওই পরামর্শক সাংবাদিককে। তাই তার সাথে একটি মোটা অংকের টাকায় দফারফা হয়েছে! একইভাবে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের ম্যানেজ করার নাম দিয়ে কেয়ারটেকার সাইফুল ভবনের মালিকের কাছ থেকে সর্বসাকুল্যে ১৭ লাখ টাকা মালিক থেকে হাতিয়ে নিয়েছে!

জানা গেছে, মালিকের কাছ থেকে নিহতের একজনের পরিবারের জন্য পাঁচ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে। কিন্তু দেয়া হয়েছে দুই লাখ টাকা করে। নিহতের পরিবারের সদস্যরা এত কম টাকায় মীমাংস করতে না চাওয়ায় তাদেরকে বিভিন্ন দালাল দিয়ে হুমকি ও ফুঁসলিয়ে টাকাগুলো নিতে বাধ্য করা হয়। এভাবে ওই হোটেল ও কটেজ মালিক নেতাদেরও দেয়া হয় টাকা। এছাড়াও যাদের নাম দিয়ে মালিকের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছিলো তাদেরও দিয়েও একটি মোটা অংক সাইফুল নিজে হজম করে ফেলেছে। তার থেকে ভাগ পেয়েছে আবুল মিস্ত্রিও! গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গেলে, ওই ভবনে কাউকে পাওয়া যায়নি। একইভাবে আশেপাশে আরো যেসব অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানেও সবাই লাপাত্তা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই ঘটনার পর থেকে কেয়ারটেকার সাইফুলকে দেখা যায়নি। তিনি আড়ালে থেকে সব কিছু ম্যানেজ করেছে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত কেয়ারটেকার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ওই কটেজটি এসময় আমি ভাড়া নিয়ে চালাতাম। এই নিয়ে মালিকের সাথে দ্ব›দ্ব সৃষ্টি হলে তখন থেকে আমি জড়িত নেই। দুই শ্রমিক মারা যাওয়ার সাথেও আমার কোনো ধরণের সংশ্লিষ্টতা নেই। মূলত একটি পক্ষ আমার ক্ষতি করার জন্য এই অভিযোগ করছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সেলিম উদ্দীন বলেন, ‘নিহতের মরদেহ ময়না তদন্ত করা হয়েছে তবে এখন পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে এজাহার বা কোনো ধরণের অভিযোগ কেউ আসেনি। পুলিশের নামে টাকা নেয়ার বিষয়ে ওসি (তদন্ত) বলেন, ‘পুলিশের নাম দিয়ে কেউ টাকা নিয়ে থাকলে তার দায় আমাদের নেই। আর সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলেও ওই লোকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’