এবার গঙ্গাপূজা ও গঙ্গাস্নানের সময় রবিবার রাত ৯ টা ১৪ মিনিট থেকে ভোর ৪ টা ৩৬ মিনিট পর্যন্ত। সরেজমিনে দেখা যায় গতকাল শুক্রবার থেকেই যাদুকাঁটা নদীর তীরে শ্রী শ্রী অদ্বৈতাচার্য জন্মধাম আখড়া বাড়ি, গড়কাটি ইস্কন মন্দির,অনুকূল ঠাকুরের আশ্রম সহ আসেপাশের গ্রামগুলোতে লোকজন সমবেত হচ্ছেন ।

সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তে শ্রী শ্রী অদ্বৈতাচার্য জন্মধামে  সাড়ে সাতশো বছরের ঐতিহ্যবাহী মিলনমেলা ও গঙ্গাস্নান ১৯ মার্চ দিবাগত-রাত।   সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় জানা প্রতিবছর চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে যাদুকাঁটা নদীতে  গঙ্গাস্নান ও মহা বারণী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই সময়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্ত-দর্শনার্থীদের সমসগম ঘটে। এবার গঙ্গাপূজা ও গঙ্গাস্নানের সময়  রবিবার রাত ৯ টা ১৪ মিনিট থেকে ভোর ৪ টা ৩৬ মিনিট পর্যন্ত। সরেজমিনে দেখা যায় গতকাল শুক্রবার থেকেই যাদুকাঁটা নদীর তীরে শ্রী শ্রী অদ্বৈতাচার্য জন্মধাম আখড়া বাড়ি, গড়কাটি ইস্কন মন্দির,অনুকূল ঠাকুরের আশ্রম সহ আসেপাশের গ্রামগুলোতে  লোকজন সমবেত হচ্ছেন ।

মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য মাধব দাস জানিয়েছে স্নান রবিবার রাত্রে হলেও শনিবার বিকাল থেকেই লোকের ঢল নামবে যা চলবে সোমবার সকাল পর্যন্ত। তিনি জানান ভক্তদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য আমরা মন্দির পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রাশাসক সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথেই কথা বলেছি সভা করেছি এবং সবধরনের প্রস্তুতিই ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস প্রাচীন রেনুকা নদী বর্তমান যাদুকাঁটা নদীতে শ্রী শ্রী অদ্বৈতাচার্য তার মাতৃ দেবীর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার জন্য সাধনা করে সপ্ত গঙ্গার আগমন করিয়েছিলেন।  ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ঐতিহ্যবাহী পণতীর্থ ধাম ও মহা বারণী গঙ্গাস্নান প্রচল।সনাতন ধর্মালম্বী পণ্ডিতেরা অদ্বৈতাচার্যকে পরম বৈষ্ণব সাধন ও  মহাপুরুষ মনে করেন কেউ কেউ অবশ্য বিষ্ণু মনে করেন।

এই অদ্বৈতাচার্য প্রভুর নির্দেশনা মতে ও তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে যাদুকাঁটা নদীর তীরে প্রতি বছর উৎসবের আয়োজন করা হয়। রয়েছে শ্রী অদ্বৈতাচার্য মন্দির যেখানে পূঁজা-পার্বন করা হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায় অদ্বৈতাচার্য(১৪৩৪-১৫৫৯ খ্রিস্টাব্দ)  বর্তমান বাংলাদেশের শ্রীহট্ট জেলার ( বর্তমান সিলেট জেলা) নবগ্রাম- লাউড় ( বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার রাজারগাঁও)  গ্রামের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। জন্মের সময় তাঁর  পরিবারিক নাম ছিল কমলাক্ষ। জন্মের পর কিছুকাল সিলেটে অতিবাহিত করেন। এরপর তিনি নদীয়া জেলার শান্তিপুরের গঙ্গাতটে( বর্তমানে মতীগঞ্জ, ভারত)স্থানান্তরিত হয়ে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। কমলাক্ষ মাধবেন্দ্র পুরীর কাছ থেকে বৈষ্ণব দীক্ষা গ্রহণ করেন এর মাধ্যমেই তিনি অদ্বৈতাচার্য উপাধি লাভ করেন। মাধবেন্দ্র পুরী   বৈষ্ণব ধর্মের প্রবক্তা শ্রী চৈতন্য দেবেরও গরু ছিলেন।

এদিকে চৈতন্য দেবের আবির্ভাবের পূর্বেই অদ্বৈতাচার্য প্রসিদ্ধি লাভ করেন এবং নবদ্বীপের ভক্তদের নিকট একজন পথ প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।  তিনিই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে  চৈতন্য দেব( শ্রী গৌরাঙ্গ)  কে স্বয়ং ভগবান মানেন। পুরীতে এক রথ যাত্রা অনুষ্ঠানে অদ্বৈতাচার্য ঘোষণা করেন শ্রী চৈতন্য দেব একজন অবতার। সনাতন ধর্মালম্বী ভক্ত এবং ঐ এলাকার মানুষেরা বলেন আমাদের  জন্মভূমিতে এমন একজন পূণ্য পুরুষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে আমরাও গর্ববোধ করি। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত-দর্শনার্থীরা আসতে খুব ভোগান্তিতে পরেন যার কারণ কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা।এলাকার বাসিন্দা রাসেল আহমেদ বলেন রাস্তা-ঘাট খুবই খারাপ , তাছাড়া লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে এখানে কিন্তু নেই কোনো আবাসিক ব্যবস্থাও যা দুঃখজনক প্রতিনিধি ও মন্দির কমিটি এই বিষয়গুলোতে আরো বেশি মনোযোগ দেয়া  উচিৎ।