প্রকল্প অনুমোদন হয়নি, অথচ তড়িঘড়ি করে ব্যক্তিগত জমিতে আগ্রিম রাস্তার কাজ করার অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।কাজ বন্ধ রাখতে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারা জারিও করা হয়। কিন্তু কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ফায়েকুজ্জামান বাবুল। এমন ঘটনা ঘটেছে মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নে। মামলার নথি, ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও এলাকা ঘুরে জানা যায়, সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কিছুদিন আগে কাবিখা প্রকল্পে ‘হোসনাবাদ মরহুম আনু পুস্তির বাড়ির নিকট হইতে আবুল সত্তার মোড়লের বাড়ি ইইয়া চরনাচনা বয়াতীবাড়ী’ পর্যন্ত মাটির রাস্তার সংস্কারের জন্য সদর উপজেলা পরিষদে চিঠি দেয়া হয়। যার জন্য তিন লাখ টাকা খরচ উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু সেই প্রকল্প এখনো অনুমোদন দেয়নি পরিষদ, প্রশাসন কিংবা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। অথচ,উল্লেখিত জায়গায় ভেকু দিয়ে মাটিকাটা শুরু করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এতে চরনাচনা গ্রামের আবুল কালাম পুস্তি ও বাচ্চু পুস্তির জায়গার উপর জোড়পূর্বক মাটি ও গাছপালা কর্তণ শুরু করেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান। মৌখিকভাবে বিষয়টি আপত্তি জানালে কর্ণপাত না করলে আদালতে দারস্ত হন ভুক্তভোগীরা। পরে গত ০৬ মার্চ মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিকার চেয়ে মামলা করেন তারা। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে উল্লেখিত জায়গার উপর কাজ বন্ধ রাখতে ১৪৫ ধারা জারি এবং এ ব্যাপারে থানা পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতেও নির্দেশ দেন আদালত। পরে ১৪ মার্চ ঘটনাস্থল গিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে লিখিতভাবে নির্দেশ দেন সদর মডেল থানার এসআই মোস্তফা কামাল। এককিছুর পরও কাজ চলমান রেখেছে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান।
এতে বড়মাপের ক্ষতির সম্মুক্ষিন হচ্ছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ক্ষতিগ্রস্থরা বলেন, আমাদের জায়গার উপর দিয়ে চেয়ারম্যান অনুমোদন হয়নি এমন প্রকল্পের নামে রাস্তা নির্মাণ শুরু করেছেন। ওই জমিতে পুরনো বেশকিছু গাছপালা কর্তণও করেছেন। বিষয়টি নিয়ে বার বার আপত্তি জানালেও থেমে এই রাস্তা নির্মাণ। পরে আদালতে দায়স্ত হয়েছি আমরা। অথচ, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কাজ চলমান রেখেছেন তিনি। আমরা এর প্রতিকার চাই। অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ফায়েকুজ্জামান বাবুল বলেন, প্রকল্পটি এখনো অনুমোদন হয়নি, সামনে বৃষ্টি হবে তাই অগ্রিম রাস্তার কাজ করে রাখছি। কারণ বৃষ্টি হলে কাঁদাপানিতে রাস্তার কাজ করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে বাদীরা অভিযোগ তুলেছে, সেই ব্যাপারে সমাধান হয়েছে। আর আদালত থেকে প্রাপ্ত চিঠি পুলিশের মাধ্যমে পেয়েছি। আর যদি প্রকল্পটি অনুমোদন না হয়, তাহলে ব্যক্তিগত খরচে পুরো কাজটি সমাপ্ত করে দিবো।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার এসআই মোস্তফা কামাল বলেন, চেয়ারম্যান ওই জমিতে কোন অবস্থাতেই রাস্তা সংস্কার করতে পারবে না। যদি করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, কাবিখা প্রকল্পে কাজ শ্রমিকদের বা নিমজমুর দিয়ে করতে হয়। অর্থাৎ কাজের বিনিময়ে খাদ্য। আর প্রকল্প অনুমোদনছাড়া কোন অবস্থাতেই কেউ অগ্রিম কাজ করতে পারেনা। এছাড়া বিরোধপূর্ণ জমিতে এই প্রকল্প অনুমোদনের কোন সুযোগ নেই। মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন জানান, বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। চেয়ারম্যান যদি এমন কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, তাহলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জনপ্রতিনিধি হয়ে এমন কাজ করতে পারেন না। আর প্রকল্প অনুমোদন না নিয়ে তিনি রাস্তার কাজও করতে পারেন না।