আ.লীগ নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও দেখি—নতুন নামে, পুরনো চেহারায় দেশ চালাচ্ছে অপশক্তি।
মোঃ আমজাদ হোসেন
দেবিদ্বার, কুমিল্লা।
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
সম্প্রত্তি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে এক স্টাটাস দিয়ে বিএনপি নিয়ে নিজেদের বর্তমান ও অতীতের অবস্থান তুলে ধরেন সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জরুল আহসান মুন্সির পুত্র ব্যারিস্টার রিজভী উল আহসান মুন্সি। তিনি তার নিজস্ব ভেরিফাই ফেইসবুক একাউন্টে লিখেন
( পুরো স্টাটাসটি তুলে ধরা হল)
আমি ১/১১ থেকে আজ পর্যন্ত নিপীড়নের শিকার। জন্মসূত্রে বিএনপির রাজনীতির মানুষ আমি। দুঃখ, প্রতারণা আর আওয়ামী লীগের নির্যাতন—সবকিছুর সাক্ষী আমি। ১৫–১৬ বছর পর আজ দেখি, একটি দেশ যেন দমিয়ে রাখা হয়েছে। এমন এক শাসন চলছে, যারা গণতন্ত্র বলতে কিছুই বোঝে না।
আমার চাওয়া ছিল খুব সামান্য—আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া ছিল, আওয়ামী লীগের পতন দেখতে চাই। আজ তারা নিষিদ্ধ, সাময়িক হলেও তা-ই। এই সিদ্ধান্ত হয়তো আইনি দিক থেকে বিতর্কিত, কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তবে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও দেখি—নতুন নামে, পুরনো চেহারায় দেশ চালাচ্ছে একই অপশক্তি।
আমি শতভাগ বিএনপি। দলের এক একজন অন্ধ কর্মী যেসব ত্যাগ করেছে, সেই কষ্ট বুকে নিয়ে বেঁচে আছি। কিন্তু আমি আইন ও ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করি—অবৈধভাবে অর্জিত ক্ষমতা মানুষকে নষ্ট করে দেয়, তার চেয়ে বেশি নষ্ট করে দেয় যখন সেই ক্ষমতা এখনো অর্জিতই হয়নি।
এখন আসি দেবিদ্বারে। এটি কেবল রাজনৈতিক অস্থিরতা নয়, এটা এক প্রকার দখলদারি। আগে ছিল SAD, এখন এসেছে NCP। সরকারি অফিসগুলো তারা একে একে দখল করে নিয়েছে। যেন ছায়া সরকার চলছে, যারা এখনো ক্ষমতাসীনদের ছায়ায় নিরাপদ। থানার ওসিকে বলুন “হাসনাত”, ওসি উঠে দাঁড়াবে—এই বাস্তবতা।
আমি হাসনাতকে দোষ দিচ্ছি না। বরং বলছি—সালাম জানাই, সে ক্ষমতা পেরেছে চালাতে, এখনো অপব্যবহার করেনি, এটাও ভালো দিক। কিন্তু আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পর আবার আওয়ামী লীগের লোকদের রাজনীতিতে ফেরানো? একটু ভাবুন—পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে আপনার সংগঠন কী অবস্থায় আছে? ইউনিয়নের ১৫টি কমিটি বানাতে গেলে যাদের আশ্রয় নিচ্ছেন বা যাদের আশ্রয় দিচ্ছেন—তারা কারা?
আমার চাচা এ.এফ.এম. তারেক মুন্সী তো খোদ আওয়ামী লীগের লোক। সে দেবিদ্বারে আওয়ামী পুনর্বাসনের কান্ডারী। এখন দেখি NCP-ও সেই পথে হাঁটছে। জামায়াত প্রসঙ্গে আমি কিছু বলতে চাই না—আমার নেতা প্রথম দিনই শিখিয়েছেন, আমরা বিরোধী দল ছিলাম, আছি, থাকব। আমি অপেক্ষায় আছি—নির্বাচন হোক, আজ হোক বা কাল হোক, আমরা তখনই জবাব দেবো।
দেবিদ্বারে রাজনীতির মানে যদি হয়—হাসনাত বা এফএম তারেক এর আশ্রয়ে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন—তাহলে আমরা প্রতিবাদ করবো, শান্তিপূর্ণভাবে। কিন্তু নির্বাচন আসলে—চিত্র পাল্টে যাবে। দেবিদ্বার মানে বিএনপি। মানে মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী।
একটা কথা ইতিহাসে তুলে রাখুন—একসময় হাসনাতই ছিলেন সেই নেতা, যার কারণে শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিল। আজ তিনিই যেন তাঁর দলকে আশ্রয় দিচ্ছেন? এই ৯টি ওয়ার্ডে আপনার দলের অনেকেই আওয়ামী ঘরানার। এখন NCP-কে কেন্দ্র করে অভিযোগ উঠছে—আওয়ামী লীগকে আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, পুনর্বাসন করা হচ্ছে।
আরো বলতে চাই—আমি আমার দলের সবাইকে স্পষ্ট করে বলেছি—যারা দুর্নীতিতে জড়িত বা অভিযোগ আছে, তাদের সঙ্গে আমরা এক নই।
মাশিকারা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে গালাগালি করে নাম পরিবর্তনের চাপে ফেলছে আপনার লোকজন—এটা কী ধরনের আচরণ? আওয়ামী লীগ যা করেছে ১৬ বছর ধরে, সেই আচরণই আজ করছেন আপনার আশেপাশের লোকজন?
শালঘরের কথা বলি—আওয়াল যেভাবে আপনার ঘনিষ্ঠ হয়েছে, আপনি জানেন কি ওখানকার ইউনিয়ন সচিব কত দুর্নীতিগ্রস্ত? সরকারি অনুদানে কী হয়, সবাই জানে। ঘুষ ছাড়া ন্যূনতম কাজও হয় না। লিখিত অভিযোগ আছে, এবং সবকিছু চলছে খোলামেলা। আপনি যদি আওয়ালকে আশ্রয় দিয়ে থাকেন, তাহলে এসব আপনার দ্বারপ্রান্তেই ঘটছে।
এই হলো দেবিদ্বারের রাজনীতি। এখন আল্লাহই ভরসা।
তাই আমি বলছি—নতুন দল গড়ার নামে পুরোনো আওয়ামীদের তুলে এনে দল ভারী করবেন না। অতীত পুনর্ব্যবহার করে ভবিষ্যৎ গড়া যায়
না। যাদের কাছে আমরা ১৬ বছর ধ্বংস হয়েছি, তাদের দিয়ে গড়া নতুন দল মানেই আত্মসমর্পণ।