শৈশবের সমুদ্রপ্রেম থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জায়গা করে নেওয়া—এভাবেই স্বপ্নপূরণের যাত্রা এগিয়ে নিয়েছেন "ইমতিয়াজ আহমদ সাকিব"। বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির সমুদ্রবিজ্ঞান ও জললেখবিজ্ঞান বিভাগের এই প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবার অর্জন করেছেন ইউরোপের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক বৃত্তি ইরাসমাস মুন্ডাস।
ইউরোপীয় কমিশনের সহায়তায় প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মেধাবী শিক্ষার্থীদের এই বৃত্তির মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়। প্রোগ্রামটি এতটাই প্রতিযোগিতামূলক যে এতে আবেদনকারী হাজারো শিক্ষার্থীর মধ্যে কেবলমাত্র অল্প কয়েকজন সুযোগ পান। প্রতিবছর প্রায় ৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮৫টি প্রোগ্রামে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী এবং দেড় হাজার পিএইচডি গবেষককে এ বৃত্তি প্রদান করা হয়।
সাকিব বলেন, "আমার ছোটবেলা থেকেই সমুদ্রকে ভিন্নভাবে অনুভব করতাম। সেই টান থেকেই মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই। চার বছরের পড়াশোনায় সমুদ্রের প্রতি ভালোবাসা আরও বেড়ে যায়। তখন থেকেই গবেষণার দিকে ঝোঁক তৈরি হয়।"
তিনি আরও জানান, রিসার্চের প্রতি সবসময়ই আগ্রহ ছিল, কিন্তু আমাদের ইউনিভার্সিটিতে তখন রিসার্চ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ড. ফেরদৌসি ম্যাডামের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি আমাকে তার রিসার্চ প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ দেন। তখন থেকেই রিসার্চের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করেও আমি ম্যাডামের সঙ্গে রিসার্চে যুক্ত ছিলাম। তিনিই আমাকে পিএইচডি এবং বিভিন্ন স্কলারশিপে আবেদন করতে অনুপ্রেরণা দেন।
ইরাসমাস মুন্ডাস বৃত্তি নিয়ে সাকিবের অভিজ্ঞতা হলো প্রতিটি প্রোগ্রামের আলাদা চাহিদা থাকে। তাই আবেদন করার সময় কেবল সাধারণ তথ্য নয়, বরং নিজের দক্ষতা ও গবেষণার লক্ষ্যগুলো স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা জরুরি। "কেন প্রোগ্রামে পড়তে চাই, সেখানে কী শিখতে চাই—এসব বিষয় সঠিকভাবে তুলে ধরাই মূল পার্থক্য গড়ে দেয়," যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও যুক্ত করেন, "প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ বিষয়ে ওয়ার্কশপ হয়। যদি আমাদের ইউনিভার্সিটিতেও ( বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি) এমন আয়োজন করা যায়, তাহলে সবাই আরও ভালোভাবে বিভিন্ন বিষয় জানতে পারবে এবং দিকনির্দেশনা পাবে।"
বৃত্তির আওতায় সাকিব আগামী চার সেমিস্টার পড়াশোনা করবেন ইউরোপের শীর্ষ নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যে রয়েছে স্পেনের রে জুয়ান কার্লোস ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্যের ব্যাঙ্গর ইউনিভার্সিটি এবং পর্তুগালের লিসবন ইউনিভার্সিটি। এছাড়া, একটি সামার ইন্টার্নশিপের জন্য তার যাত্রা যাবে মেক্সিকোতেও।
সাকিবের এই অর্জন শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নতুন সম্ভাবনার দরজা উন্মোচনের দৃষ্টান্তও বটে।