দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মৎস্য চাষের অন্যতম প্রধান এলাকা বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার চাষিরা এখন বিপর্যস্ত। একদিকে ভাইরাস সংক্রমণ, অন্যদিকে টানা বৃষ্টিপাত, অস্বাভাবিক জোয়ার ও নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে উপজেলার অধিকাংশ মাছের ঘের, পুকুর ও নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। চাষিদের ভাষ্য অনুযায়ী, এতে তাদের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা।
ঘেরভর্তি মাছ ভেসে গেছে জোয়ারে
ফকিরহাট উপজেলার ভৈরব, চিত্রা ও কালীগঙ্গা নদী তীরবর্তী এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ও ঘের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চাষিরা নিজ নিজ ঘেরের আইল মেরামত ও জাল দিয়ে মাছ আটকে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। তবুও জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে ছোট-বড় মাছ বের হয়ে যাচ্ছে খাল, নদী ও উন্মুক্ত জায়গায়। অনেকে উঠোন, রাস্তা ও পাশের খালে মাছ ধরতে ব্যস্ত।
ভাইরাসে মরে যাচ্ছে চিংড়ি, চাষিদের মাথায় হাত
ফকিরহাট মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা ৪৩০টি বাগদা চিংড়ি ঘেরে ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে। এছাড়া ৬২৫টি ঘের ডুবে গেছে বা ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রায় ৩০০ একর জমিতে গলদা ও বাগদা চিংড়ির ঘের ধসে পড়েছে।
চাষিরা বলছেন, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাগদা চিংড়ি মারা যাচ্ছে এবং সেই মরা মাছ খেয়ে উচ্চমূল্যের গলদা চিংড়িও মারা যাচ্ছে বা বিক্রিযোগ্যতা হারাচ্ছে। ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টায় যারা নেট ও বাঁধ নির্মাণে ব্যস্ত, তাদের অধিকাংশই ঋণগ্রস্ত। এ অবস্থায় তারা প্রায় নিঃস্ব।
পোনা সংকট, চোরাপথে ভারতীয় মাছ
দেশীয় হ্যাচারিতে পর্যাপ্ত রেনু উৎপাদন না হওয়া এবং নদী থেকে পোনা আহরণে নিষেধাজ্ঞার কারণে চাষিরা বাধ্য হয়ে ভারত থেকে চোরাপথে পোনা আমদানি করছিলেন। তবে এসব পোনা আশানুরূপ উৎপাদন না দেওয়ায় তাদের লোকসান আরও বেড়েছে।
মৎস্য কর্মকর্তার ‘ক্ষতি হয়নি’ মন্তব্যে ক্ষোভ
ফকিরহাট উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শেখ আছাদুল্লাহ বলেন, “মাছ ঘের ও পুকুর থেকে ভেসে গেলেও মৎস্য বিভাগের দৃষ্টিতে ক্ষতি হয়নি, কারণ মাছগুলো মারা যায়নি।” তিনি আরও জানান, ভাইরাস মোকাবেলায় মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, ব্যানার টানানো ও মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ সভা চালানো হচ্ছে।
তবে চাষিদের বক্তব্য, সরকারি সহযোগিতা অপ্রতুল ও বাস্তবতা বিবর্জিত। তাদের দাবি, দ্রুত আর্থিক সহায়তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।