মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের ভেতরের পরিবেশ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে সম্প্রতি তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। জাদুঘরে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠের স্মৃতিচিহ্ন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের পরিবর্তে আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের বইয়ের আধিক্য দেখা যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা, সেখানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকরা এবং কমলগঞ্জের জুলাই বিপ্লবের সমন্বয়করা।
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) ঈদ ভ্রমণে কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে যাওয়া রাব্বি মিয়া নামক এক ব্যক্তি জাদুঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা ফেসবুকে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। তার বর্ণনায়, জাদুঘরের ভেতরে প্রবেশ করে তিনি দেখতে পান সেখানে একটি লাইব্রেরির মতো অংশে প্রচুর বই সাজানো রয়েছে। তবে কাছে গিয়ে তিনি হতবাক হয়ে দেখেন, সব বই-ই আওয়ামী লীগ, শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে লেখা। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরে তার জীবন বা কর্ম নিয়ে কোনো বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কিত পর্যাপ্ত বইয়ের অভাবও চোখে পড়ার মতো।
যাদুগর ঘুরে দেখতে গিয়ে ছিলেন এমন একজন
রাব্বি মিয়া তার ফেসবুক পোস্টে জাদুঘরের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি উল্লেখ করেন, জাদুঘরের দেখভালের দায়িত্ব বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) উপর ন্যস্ত থাকলেও, তাদের বক্তব্যে অসঙ্গতি দেখা গেছে। প্রথমে একজন বহিরাগত ব্যক্তি তাদের জাদুঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলেন এবং জানান সেখানে একজন ডিউটিরত ব্যক্তি থাকলেও এখন নেই, তাছাড়া এখন বিজিনি দায়ত্বে আছে। পরবর্তীতে বিজিবির সদস্যরা এসে জাদুঘর বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেন। বইয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা কোনো সদুত্তর দেননি।
পোস্টটিতে আরও বলা হয়, জাদুঘরের এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। বীরশ্রেষ্ঠের নামে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের বা ব্যক্তির প্রচারমূলক সাহিত্য কীভাবে স্থান পায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ও সেখানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকরা। অভিযোগ উঠেছে, জাদুঘরটিকে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রচারকেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে।
এদিকে, ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়েও জাদুঘরে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট বই থাকার খবর ছড়িয়ে পড়লে কমলগঞ্জের জুলাই বিপ্লবের সমন্বয়করা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে রাব্বি মিয়া বিশৃঙ্খলা এড়াতে তাদের শান্ত থাকতে অনুরোধ করেন এবং কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানানোর কথা বলেন। কমলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (টিএনও) নাকি বিষয়টি সমাধানের জন্য ২ দিনের সময় চেয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটক এবং জুলাই বিপ্লবের সমন্বয়করা মনে করেন, একজন বীরশ্রেষ্ঠের নামে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরের মর্যাদা রক্ষা করা এবং সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা অপরিহার্য। কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রচারণার কেন্দ্র হিসেবে এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করা উচিত নয়। দ্রুত এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কমলগঞ্জের জুলাই বিপ্লবের সমন্বয়করা। পাশাপাশি, জাদুঘরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনারও দাবি জানিয়েছেন সকলে।