রাসেল মোল্লার বাবা আমজাদ মোল্লা বাদী হয়ে সোমবার (০৮ সেপ্টেম্বর) রাতে গোয়ালন্দ থানায় এই মামলা করেন। পরে ওই মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরীফ আল রাজীব।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন গোয়ালন্দ উপজেলার পৌর শহরের আলম চৌধুরী পাড়ার বাসিন্দা অভি মন্ডল রঞ্জু (২৯) ও মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বড় ঠাকুরকান্দি গ্রামের মোঃ আবদুল লতিফ (৩৫)। তাঁদের মধ্যে আবদুল লতিফ গোয়ালন্দ উপজেলার কছিম উদ্দিন পাড়া এলাকার ছমির মোল্লা জামে মসজিদের ইমাম। তিনি মাজারে হামলা ভাঙচুর, কবর থেকে লাশ তুলে পোড়ানো ও রাসেল মোল্লা হত্যার ‘প্রত্যক্ষ নির্দেশদাতা’ বলে মঙ্গলবার (০৯ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব।
এর আগে শুক্রবার (০৫ সেপ্টেম্বর) রাতে পুলিশের করা মামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের দুই নেতাসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে ঘটনার পরদিন শনিবার থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে দুটি মামলায় ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়ালন্দঘাট থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শুক্রবার দুপুরে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা নিয়ন্ত্রণের সময় পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় রাতেই মামলা করে পুলিশ। এতে অজ্ঞাতনামা সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তিকে আসামি করেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা। এতে দুই মামলা অজ্ঞাতনামা আসামি পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ হাজার। সোমবার রাতে করা মামলায় রাসেল মোল্লাকে হত্যা ছাড়াও দরবারে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, কবর থেকে লাশ তুলে নিয়ে পোড়ানো, লুটপাট ও জখমের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব বলেন, পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় গোয়ালন্দ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হিরু মৃধা ও উপজেলার উজানচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাসুদ মৃধাসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তা ছাড়া গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে উপজেলার দেওয়ানপাড়া গ্রামের কাজী পাড়ার বাসিন্দা কাজী অপু ও গোয়ালন্দ পৌরসভার আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা বিল্লু নামে দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে গোয়ালন্দ বাজার শহীদ ফকির মহিউদ্দিন আনসার ক্লাব চত্বরে ‘ইমান আক্বিদা রক্ষা কমিটি’ ব্যানারে বিক্ষোভ করে উত্তোজিত লোকজন। সেখান থেকে হামলা চালানো হয় নুরাল পাগলার দরবারে। সেখানে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে নুরাল পাগলার ভক্ত রাসেল মোল্লা নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হন। এক পর্যায়ে নুরাল পাগলের লাশ কবর থেকে উঠিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দের পদ্মার মোড় নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত লোকজন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশের দুটি পিকআপ ও গোয়ালন্দ ইউএনও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৩ আগস্ট নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার মৃত্যুর পর তাঁতে দরবারের ভেতর দাফন করেন ভক্তরা। তবে কবরের ওপর নির্মিত ১০-১২ উঁচু একটি স্থাপনাকে ‘শরীয়া পরিপন্থী’ বলে অভিযোগ করে ‘স্থানীয় জনতা’। এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে গোয়ালন্দ বাজার শহীদ ফকির মহিউদ্দিন আনসার ক্লাব চত্বরে ইমান আক্বিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে বিক্ষোভের করে তারা। পরে উত্তজিত লোক সেখানে লাঠি, শাবল ও হাতুড়ি নিয়ে দরবারে হামলা করে।