চরফ্যাশন উপজেলার আবুবকরপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে কয়েক দফা পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় এ ঘটনা ঘটে। শনিবার ৯ জনকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে দুলারহাট থানা পুলিশ। 

এর আগে গত বুধবারও রাতে প্রথমে ভ্যানচালকের বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা।

নিহত ভ্যানচালকের নাম মো মাসুদুর রহমান (৩৮)। তিনি আবুবকরপুর ইউনিয়নের মাতাব্বর বাড়ি এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে। তিনি ঢাকার সাভার এলাকায় ভ্যানগাড়িতে সবজি ও ফল বিক্রি করতেন। এ ঘটনায় ২০ জন কে আসামি করে মামলা করেছে নিহতের ভাই মোঃ রায়হান । 

পুলিশ এক নারীসহ ৮জনকে আটক করলেও প্রধান অভিযুক্ত আবুবকরপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আল আমিনকে ধরতে পারেনি। তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সিকদার হুমায়ুন কবির। তিনি আজ দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ কথা জানান। এ সময় ভোলা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃবৃন্দরাও উপস্থিত ছিলেন। 

নিহতদের ভাই মোঃ রায়হান বলেন, তিনি এবং তাঁর ভাই'রা ঢাকার সাভার এলাকায় ভ্যানগাড়িতে ক্ষুদ্র ব্যবসা করেন। ঈদে তাঁরা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বুধবার রাতে তাঁর স্ত্রী আকলিমা ও তাঁর বোন সীমার মধ্যে বাড়ির সামনে বখাটেদের আড্ডা দেওয়া নিয়ে ঝগড়া হয়। এ সময় প্রতিবেশী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আলামিনসহ কয়েকজন বখাটে বাড়িতে গিয়ে ঝগড়ার কারণ জানতে চান। এ সময় তাঁর ছোট ভাই মো রাসেল তাঁদের ঘরে ঢুকতে না দিয়ে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে ওই স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার সঙ্গে তাঁদের তর্কবিতর্ক হয়। তর্কের জেরে তিনি দলবল ডেকে রাতেই তাঁদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালান এবং পরিবারের সদস্যদের মারধর করেন। পরে স্থানীয় ব্যক্তিরা ছুটে এসে তাৎক্ষণিক ঘটনার মীমাংসা করে দেন। কিন্তু আল আমিন হুমকি-ধমকি দেওয়া অব্যাহত রাখেন।


ঘটনার দিন শুক্রবার সাড়ে ১১টায় পারিবারিক কাজের জন্য তিনি এবং তাঁর আরেক ভাই মহসিন  স্থানীয় দুলারহাট বাজারে যাচ্ছিলেন। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আল আমিন ও তাঁর অনুসারীরা মোটরসাইকেলে এসে তাঁদের পথরোধ করে দুই ভাইকে বেধড়ক মারধর করেন। এরপর তাঁদের বাড়িতে গিয়ে বসতঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর শুরু করেন। বাধা দিলে পরিবারের ৬ সদস্যকে পিটিয়ে জখম করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রতিবেশীরা তাঁদের উদ্ধার করে চরফ্যাশন হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাসুদুর রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন।


নিহতের চাচা সালাউদ্দিন বলেন, বাড়ির সামনে বখাটেদের আড্ডা দেওয়ায় নিষেধ করার কারণে এ হামলা। এ ঘটনার জন্য একটি সমঝোতার তারিখ হয়েছিল। ওই সমঝোতার তারিখ উপেক্ষা করে আল আমিন শুক্রবার সকালে আবার তাঁর দুই ভাতিজার ওপর হামলা চালিয়েছেন। তাঁদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করেছেন। তাঁদের হামলা-মারধরে তাঁর ভাতিজা মাসুদুর রহমান মারা গেছেন। তাঁরা এ হত্যার বিচার চান। 

চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শোভন কুমার বসাক বলেন, মাসুদুর রহমানকে মৃত অবস্থায় ১২টা ২৫ মিনিটে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাঁর শরীরে একাধিক জখমের দাগ ছিল।

মাসুদুর রহমানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে অভিযুক্তরা পালিয়ে যাওয়ায় তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। চরফ্যাশন উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক শিকদার হুমায়ুন কবির বলেন, অভিযুক্ত আবুবকরপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আল-আমিনকে আজ শুক্রবার দুপুরে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

দুলারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ ইফতেখার জানান, হাসপাতাল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে তাঁরা ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠিয়েছি। ১জন নারীসহ ৮জনকে আটক করা হয়েছে।  এ ঘটনায় ২০ জন কে আসামি করে মামলা করেছে নিহতের ভাই মোঃ রায়হান ।