২৪' গনঅভ্যুত্থানে হাসিনা পতনের ১ দফার পূর্বের ৯ দফার অন্যতম দাবি ছিলো ক্যাম্পাসগুলোর ছাত্র সংসদ। ফ্যাসিস্টের পতনের পর আশানুরূপ ভাবেই নির্বাচনের আমেজ ছড়িয়েছে ক্যাম্পাসগুলোও, তোড়জোড় চলছে কার্যক্রমের। তবে ভিন্নচিত্র দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ বঙ্গের বাতিঘর খ্যাত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি)।
২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যাপীঠে ১৫ বছরেও হয়নি ছাত্র সংসদ। গত মে মাসে শিক্ষার্থীদের সাথে দূরত্ব ও দাবি দাওয়া না মানায় আন্দোলনের মাধ্যমে শুচিতা শরমিনের বিদায় ঘটে। এরপর নতুন ভিসি(অন্তবর্তিকালীন) হিসেবে ১৫ মে যোগদান করেন রাবি অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ তৌফিক আলম। যোগদানের ১০ দিন পর তার কাছে ৮২ দফা দাবি দেয় শিক্ষার্থীরা। সেগুলোর মধ্যে স্বল্পমেয়াদী ৪১ টি দাবির অন্যতম ছিলো দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদের আয়োজন করা। তবে পূর্বের মতো আশ্বাসেই সীমাবদ্ধতা দেখতে পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেও নেই ছাত্র সংসদের বিধান। তিনমাস পেরোলেও সেটি সংযোজনেরও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
পরিবর্তিত এই সময়েও ছাত্র সংসদ ঘিরে নেই তেমন তোড়জোড়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুসময়ের জন্য আলোচনায় স্থান পেলেও প্রশাসনের তেমন দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি ছাত্র সংসদ ইস্যুতে। দু একটি বাদে রাজনৈতিক সংগঠন গুলোর তৎপরতাও তেমন পরিলক্ষিত নয়। বর্তমানে ববিতে উন্নয়ন, আয়তন সম্প্রসারণ ও পরিবহন সংকট নিরসনে তিন দফার আন্দোলন চলমান থাকলেও, সেখানেও ছাত্র সংসদ স্থান পায়নি। সবমিলিয়ে ছাত্র সংসদ ইস্যুতে যেন কার্যত নীরব ববি।
গত ২২ - ২৭ জুলাই ছাত্র সংসদের পক্ষে বিপক্ষে একটি গণভোটের আয়োজন করে বাংলাদেশ গনতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, ববি শাখা। সেখানে ৮২.২ শতাংশ ভোটাররাই ছাত্র সংসদ চেয়ে ভোট দেন। বিপক্ষে ভোট দেন মাত্র ১১ শতাংশ। এই প্রেক্ষিতে ছাত্র সংগঠনটি গত ৩ আগস্ট উপাচার্যের নিকট একটি স্মারক লিপি প্রদান করেন। তবে এতেও তেমন সাড়া মেলেনি বলে জানান শিক্ষার্থীরা। অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি হলেও তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমনটিই অভিযোগ করছেন তারা।
এ বিষয়ে ববি গনতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ভূমিকা সরকার বলেন, কিছুদিন আগে করা গণভোটেই ছাত্র সংসদ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্খা ফুটে উঠেছে। এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনকে লিখিত জানিয়েছি, এখনো আমরা দৃশ্যমান কোনো আলাপ দেখিনি, আমরা আশা করছি শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গুরুত্বসহ দেখবেন এবং দ্রুত ছাত্র সংসদের রোডম্যাপ দিবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়, গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং বৈষম্যহীন ক্যাম্পাস গড়ার জন্য ছাত্র সংসদ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমি মনে করি, একমাত্র ছাত্র সংসদই পারে ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সমস্যার সমাধান এবং অধিকার আদায়ের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে। যেখানে কোন শিক্ষার্থী হয়রানির ঘটনা ঘটবে না, আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসে কোন শিক্ষার্থীকে জিম্মি হয়ে থাকতে হবে না। জুলাই পরববর্তী বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রসংসদ নিয়ে ইতিমধ্যে সরগরম হলেও হতাশার বিষয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত কোন অগ্রগতি আমরা দেখছি না। আমরা চাই, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্র সংসদ সংক্রান্ত আইনী জটিলতা দূর করে, দ্রুত ছাত্র সংসদ চালুর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।
ছাত্র সংসদের বিষয়ে জানতে চাইলে ববি শাখা ছাত্রদল নেতা মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি, ছাত্রদল সবসময় শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে তাদের পাশে আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের ছাত্র সংসদ প্রয়োজন, তবে আমরা তার আগে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিচার কার্যক্রম নিশ্চিত করতে চাই, ফ্যাসিস্টমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তারপর ছাত্র সংসদেের আয়োজন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে ফ্যাসিস্ট মুক্ত না করলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হবে না। তাই দ্রুত বিচার কার্যক্রম নিশ্চিত করে প্রশাসনের কাছে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবি জানাই।