রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো দিনব্যাপী জাতীয় সংলাপ “রোড টু গ্রিন ম্যানিফেস্টো: রাজনৈতিক দলসমূহের নির্বাচনী ইশতেহার—পরিবেশ, জলবায়ু ও তরুণ সমাজ” শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন। গতকাল ৩১ মে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটি পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভবিষ্যৎ অঙ্গীকার মূল্যায়ন এবং তরুণদের নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি সেশনে নানা প্রেক্ষাপট ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অতিথি, বিশেষজ্ঞ এবং প্রতিনিধি ব্যক্তিদের সক্রিয় অংশগ্রহণে পুরো আয়োজনটি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত ও ফলপ্রসূ।
আয়োজনে নেতৃত্ব দেয় Center for Atmospheric Pollution Studies (CAPS), Waterkeepers Bangladesh, Shocheton Foundation, Center for Climate Justice Bangladesh, Center for Participatory Research and Development (CPRD), Human Safety Foundation, O’creeds, Nature Conservation Management (NACOM), Center for Climate Change and Environmental Research (C3ER), Brighters এবং Young Climate Action Network (YOUCAN)।
সংলাপের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, বিশিষ্ট পরিবেশ আইনজীবী ও নীতিনির্ধারক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি তার বক্তব্যে পরিবেশগত ন্যায়বিচার ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আইনগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে অংশ নেন ফরিদা আখতার, উপদেষ্টা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়; মোঃ শামসুদ্দোহা, প্রধান নির্বাহী, সিপিআরডি এবং মোহাম্মদ আজাজ, প্রশাসক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। তাঁরা প্রত্যেকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সরকারের করণীয়, তরুণদের অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন।
দিনব্যাপী এই সংলাপে মূল আকর্ষণ ছিল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ‘ম্যানিফেস্টো টক: ইউথ, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট’ শীর্ষক বিশেষ অধিবেশন। এতে আমন্ত্রিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা তাদের দলের নির্বাচনী ইশতেহারে জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ক অঙ্গীকারসমূহ উপস্থাপন করেন। তারা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন—নির্বাচনে বিজয়ী হলে তারা কী ধরনের পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। তরুণদের পক্ষ থেকে পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বাস্তব সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে করা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রতিনিধিরা সরাসরি উত্তর দেন এবং ভবিষ্যতে পরিবেশ ও তরুণ সমাজকে প্রাধান্য দিয়ে নীতি প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দেন।
এই সংলাপে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত তরুণ পরিবেশকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, গবেষক, কমিউনিটি সংগঠক ও জলবায়ু আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ গুরুত্ব পায় জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ, প্রান্তিক এবং প্রতিনিধিত্ব-বঞ্চিত জনগোষ্ঠী থেকে আগত তরুণদের অংশগ্রহণ।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও তরুণ সংগঠনের মত বেটার লিভিং ফাউন্ডেশন-এর স্বেচ্ছাসেবকরাও এই সংলাপে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এবং তরুণদের কণ্ঠস্বর নীতিনির্ধারণী আলোচনায় তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অনুষ্ঠান শেষে আয়োজকরা জানান, এই জাতীয় সংলাপ তরুণদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে শক্তিশালী অঙ্গীকার নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণের ওপর জোর দিয়ে তারা ভবিষ্যতে এমন আয়োজন আরও বিস্তৃতভাবে করার প্রতিশ্রুতি দেন।