ডেটের জন্য বেছে নেয়া কারও বয়স নিজের বাবা-মায়ের চেয়ে বেশি হলে পশ্চিমের দেশে উপহাস করে বলা হয় ‘হাফ ইওর এজ প্লাস-সেভেন’।

এর অর্থ হলো, ২৮ বছর বয়সের নারী বা পুরুষের ২১ বছরের কম বয়সী কারও সঙ্গে ডেট করা উচিত নয় (২৮-এর অর্ধেক ১৪, আর এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে ৭ বছর)। একইভাবে ৫০ বছর বয়সের কেউ ডেটের জন্য ঝুঁকবেন না ৩২ বছরের কম বয়সী কারও দিকে (৫০-এর অর্ধেক ২৫, যোগ ৭)।

ধারণা করা হয়ে থাকে, অনানুষ্ঠানিক এই নিয়ম প্রথম চালু হয় ফ্রান্সে। এরপর প্রজন্ম ধারায় তা চলে আসছে। ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ ও সাংবাদিক সুমাইয়া কেইনস বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছেন

তিনি বলছেন, ‘একজন ২২ বছর বয়সীর সঙ্গে ১৮ বছর বয়সীর সম্পর্ক গড়া স্বাভাবিক। তবে একজন ৩৮ বছর বয়সী ব্যক্তির সঙ্গে ২৩ বছর বয়সীর ডেটে যাওয়া ঠিক নয়। সে ক্ষেত্রে বয়স ২৬ সবচেয়ে নিরাপদ। আপনার বয়স যত বেশি হবে, অনুমতিযোগ্য বয়সের ব্যবধান হবে তত বেশি: একজন ৫০ বছর বয়সীর ডেট হতে পারে ৮৬ বছর বয়সীর সঙ্গে।’

সুমাইয়া জানান, বয়সের পার্থ্যকের বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতে বিয়েবিচ্ছেদের হার থেকে আয়ু পর্যন্ত পরীক্ষা করেন বিশেষজ্ঞরা।

জনপ্রিয় ডেটিং ওয়েবসাইট- OKCupid-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ক্রিশ্চিয়ান রুডার বলছেন, বয়সের ব্যবধানের ক্ষেত্রে পুরুষ এবং নারীর মধ্যে কিছুটা ভিন্ন ধারণা রয়েছে। নারী ব্যবহারকারীরা তাদের মতো প্রায় একই বয়সী পুরুষকে খোঁজেন।

অন্যদিকে পুরুষরা নিজের বয়স বিবেচনায় না রেখেই ২০ বছরের কাছাকাছি নারীকে পছন্দ করেন। পুরুষ আসলে তরুণ সঙ্গীর খোঁজে এতটাই মত্ত যে তারা বয়সের বড় ব্যবধানকেও পরোয়া করেন না।

পুরুষ কি তবে বুদ্ধিমান?

তাত্ত্বিকভাবে বয়সের কম ব্যবধানের পক্ষে অনেক কারণ আছে। বয়সের ব্যবধান কম হলে, দুজনের শৈশবের অনেক অভিজ্ঞতা (নাটক, টেলিভিশনের অনুষ্ঠান) মিলে যায়। এটা বন্ধন মজবুত করে। এ ছাড়া কৈশোরে বিনা ভাড়ায় বাসে চড়া, জন্মদিনের পার্টির জন্য টাকা জমানোর মতো ছোটখাটো বিষয়গুলোও সম্পর্ক উষ্ণ রাখতে অনেকটাই সাহায্য করে।

তবে কিছু অর্থনীতিবিদ বলছেন, যেসব যুগলের বয়সের ব্যবধান অনেক, তারা নানা সামাজিক সুবিধা ভোগ করতে পারেন।

বয়সের সঙ্গে আয় বাড়ায় বয়স্ক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে থাকার প্রবণতা নারীদের বেশি। সন্তান জন্মের সময় উপার্জনক্ষম নারীরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। এ সময়টায় তারা সঙ্গীর কাছ থেকে বড় সমর্থন পেয়ে থাকেন।

তবে ডেনিশ জমজ বোনের ওপর চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যিনি বয়স্ক পুরুষকে বিয়ে করেছেন তার চেয়ে কম ব্যবধানের বয়সের যুগলের গড় উপার্জন খুব একটা কম নয়।

ব্যবধান কম হলে একসঙ্গে থাকার সম্ভাবনা বেশি?

আমেরিকান ম্যাগাজিন আটলান্টিক ২০১৪ সালে দাবি করে, পাঁচ বছর বয়সের ব্যবধান থাকা দম্পতির বিচ্ছেদের সম্ভাবনা ১৮ শতাংশ।

অবশ্য বয়স এবং বিয়েবিচ্ছেদের ভিত্তিতেই কেবল সাবেক এবং বর্তমান আমেরিকান যুগলের ওপর সমীক্ষাটি চালানো হয়েছিল। তাই এটিকে বিশ্বাস করার শক্ত ভিত্তি নেই।

ব্রিটেনের অফিস অফ ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে বয়স ও বিয়েবিচ্ছেদের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এই যুক্তির শক্ত যোগসূত্র খুঁজে পায়নি। তবে তারা প্রমাণ পেয়েছে ৩০ বছরের পর কোনো নারীর সঙ্গী যদি তার চেয়ে ১০ বছরের ছোট হয়, সে ক্ষেত্রে বিয়েবিচ্ছেদের সম্ভাবনা বেশি।

সাধারণ যুক্তিতে বয়সের বড় ব্যবধান প্রভাব ফেলে বার্ধক্যে। আর তাই ‘বৈধব্য’ এড়িয়ে চলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। একজন অল্প বয়স্ক, স্বাস্থ্যকর সঙ্গী আপনাকে অন্তত অনেক দিক থেকে সমর্থন দিতে পারে।

স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সিভেন ড্রেফালে ডেনমার্কের ৫০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের ওপর একটি গবেষণা চালান। এতে দেখা গেছে, যাদের সঙ্গী কম বয়সী, তারা একই বয়সের মানুষের তুলনায় বেশি দিন বাঁচে।

শিক্ষা এবং সম্পদের মতো অতিপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর পরও বয়স্ক জীবনসঙ্গীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম। এই সমীক্ষা সব সময় কার্যকর নাও হতে পারে। একজন সুস্থ পুরুষ বিশেষত অল্প বয়সী সঙ্গীদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি বৃদ্ধ বয়সেও চনমনে থাকতে পারে।

তবে রহস্যজনকভাবে এ ঘটনাটি নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে মনে করেন না সিভেন ড্রেফালে। তিনি বলেন, ‘যেসব নারীর স্বামী অল্প বয়স্ক, সেসব নারী তাদের সঙ্গীর ওপর কম নির্ভরশীল।’

ওপরের সব তথ্য বিশ্লেষণে এটা স্পষ্ট যে নারীদের জীবনসঙ্গী হিসেবে এমন কাউকে বেছে নেয়া উচিত যাদের বয়স তাদের খুব কাছাকাছি। অন্যদিকে, পুরুষের উচিত কম বয়সী নারীর সন্ধানে নেমে পড়া।

অবশ্য একজন প্রকৃত অর্থনীতিবিদ বিষয়টি বুঝতে আরও প্রমাণ চাইবেন। সম্ভবত বিভিন্ন বয়সের পার্থক্যের সঙ্গে এলোমেলো দম্পতিদের বৈবাহিক অবস্থানের তুলনা করতে চাইবেন তিনি।