বগুড়ার ছেলে আরাফাত হোসেন বিজয়, পড়াশোনা করতেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির পোর্ট ম্যানেজমেন্ট এবং শিপিং বিভাগে তৃতীয় বর্ষে।

করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যায় নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হবার কারণে ফিরে যান বগুড়ায় নিজের বাড়িতে, আর করোনার সেই সময় বগুড়া শহরে শুরু করেন কাচ্চি ও পেস্ট্রি ব্যবসা। নিজেই তৈরি করে সেই খাবার শহরের ভীতর অনলাইন পেজের মাধ্যমে সরবরাহ শুরু করেন।  চালু করেন "কাচ্চি খাচ্ছি" নামের অনলাইন ভিত্তিক কাচ্চির ব্যবসা। অল্প দিনেই বেশ  জনপ্রিয়তা পায় তার কাচ্চির। পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিজেই শুরু করেন বাবুর্চির কাজ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনায়াসেই ২৫০-৩০০ মানুষের গরুর মাংস,কোরমা, মুরগির রোস্ট, কাচ্চি ইত্যাদি পদের খাবার। প্রতিমাসে আয় করতেন ৪০-৪৫ হাজার টাকা ।

কিন্তু করোনার পরে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে ঢাকায় চলে আসেন, শুরু হয় নতুন কর্মপরিকল্পনা, কিভাবে আবার ঢাকায় কিছু করে সফল হওয়া যায়। সেই প্রেরণা থেকে শুরু করেন কেক বানানো। নিজের ফেসবুক পেজ 'Slice' এর মাধ্যমে সেগুলোর অর্ডার নেওয়া ও ডেলিভারি দেওয়া শুরু করেন। খুব অল্প দিনের মধ্যেই বেশ পরিচিতি পায় তার কেকের। এখন প্রতি মাসে ৫০-৬০ কেকের অর্ডার পান। নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি সেগুলো তৈরি করে ডেলিভারি দেন। এতেই প্রতিমাসে আয় করেন ২০-২৫ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজয় বলেন, আসলে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর জন্য শুধুমাত্র পড়াশোনা কখনো একমাত্র কাজ হতে পারে না, পড়াশোনার পাশাপাশি স্কিল ডেভেলপমেন্ট একজন শিক্ষার্থীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীতে কেউ প্রতিভা নিয়ে জন্মায় না। ভাললাগা বা ভালবাসার কাজ গুলো প্রতিভায় রূপান্তরিত হয়। মানুষের কর্মজীবন যেদিকে পরিচালিত করা উচিত, যে কর্মে তার বিরক্তির ছাপ আসে না, ভালো লাগা থেকে করে, যেখানে জোর করে চাপিয়ে দেবার মতো কিছু থাকে না, মানুষ স্বইচ্ছায় তার নিজের কাজ বরণ করে নেয়। ছোটবেলা থেকে ফুডি হবার কারণে রান্না করতাম, কিন্তু নিজে খাবার পর বাকি খাবার ফ্রিজে রেখে দিতে হত বা নষ্ট হয়ে যেত। সেই সময় রান্নার পিছনে ব্যয় করা অর্থ আমার হাত খরচ প্রায় শেষ করে ফেলেছিল।

শুধুমাত্র সেই হাত খরচ তুলতে গিয়ে আমি অর্থের গুরুত্ব বুঝতে পারি এবং ব্যবসার দিকে ঝোঁক আসে। আমাদের একান্নবর্তি পরিবারে কোন চাকুরিজীবীও নেই। তো ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা আগে থেকেই ছিল। ব্যবসায় নিজের দিকে খেয়াল না করে কাস্টমারের চাহিদার দিকে গুরুত্বারোপ আমি মুখ্য বলে মনে করি এই উদ্দ্যোগতা কালীন জীবনে। আমার ইচ্ছা আছে বাংলাদেশে নামকরা একটা ক্লাউড কিচেন দেয়া। যার সাথে আমি বা আমার প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক সেবা দিতে পারবে।

এই সপ্নবাজ তরুণ উদ্যোগতা আরো জানান, বগুড়ায় করোনা কালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ১০১টি কেক বানানো ছিল, তার ব্যবসায়িক জীবনে অন্যতম একটি কাজ। তার এই সফল উদ্যোগতা হবার কারণে তার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তার সহপাঠীতা আনন্দিত।