তাক্বদীরে বিশ্বাস ঈমানের অন্যতম একটি রুকন। এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করা পর্যন্ত কারো ঈমান পূর্ণ হবে না। তাক্বদীরের অর্থ: কোন কিছুর পরিধি, সীমা বা পরিমান। জগতের যাবতীয় বিষয়সমূহের সম্পর্কে কোন কিছু ঘটার পূর্বেই সে বিষয় সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালার সাম্যক জ্ঞান, সেগুলি লিপিবদ্ধ করণ, তদ্বিষয়ে তাঁর পূর্ণ ইচ্ছার সমন্বয় এবং সেগুলিকে সৃষ্টি করাকে তাক্বদীর বলা হয়। পাঁচটি পর্যায়ে তাক্বদীর লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। প্রথমত, আসমান-যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্র্বে সবকিছুর তাক্বদীর লিখে রাখেন। বান্দাহ গণের ভাগ্যে ভাল- মন্দ যা কিছু লিখে রাখা হয়েছে, তা-ই সে পাবে।
দ্বিতীয়ত, রুহের জগতে মহান আল্লাহ তার বান্দাহদের অঙ্গীকার করিয়েছেন যে, একমাত্র তিনিই আমাদের প্রতিপালক। এবং আরও অঙ্গীকার করিয়েছেন যে, আমরা যেন তার সাথে অন্য কিছু শরীক না করি। তৃতীয়ত, মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় তার আয়ু, কর্ম, রিযিক্ক এবং সে সৌভাগ্যবান নাকি দূর্ভাগা তা ফিরিশতা কতৃক লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। চতুর্থত, প্রত্যেক ক্বদরের রাতে ঐ বছরের সবকিছু লেখা হয়। এবং পঞ্চমত, পূর্বের লিখিত তাক্বদীর অনুযায়ী প্রত্যক দিন সবকিছু আমলের উপর ভিত্তি করে বাস্তবায়িত হয়।
এখন মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, আল্লাহ কর্তৃক মন্দ ও অকল্যাণ সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি? মহান আল্লাহ কতৃক সৃষ্ট মন্দ বিষয় সমূহ সমগ্র মানব জাতি ও জ্বীন জাতিকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন যেন আমরা পবিত্র-অপবিত্র, সত্য-মিথ্যা, ভাল-মন্দ পার্থক্য করতে পারি। এজন্যই তিনি কিছু বিষয় আমাদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন, আর প্রায় সব কিছুই হালাল করেছেন। আমাদের মনে আরেকটি প্রশ্ন জাগতে পারে, পথপ্রদর্শন এবং পথভ্রষ্টকরন কি আল্লাহ তায়ালার হাতে? কুরআনে বলা হয়েছে, ’আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল সঠিক পথে পরিচালিত করেন।’ (সূরা আনআম-৩৯)।
যেহেতু মহান আল্লাহ কারো প্রতি বিন্দুমাত্র যুলুম করেন না, সেহেতু বোঝা যায়, আল্লাহ বান্দাকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি, কর্মশক্তি, সুষ্ঠু বিবেক বুদ্ধি এবং ইসলামী স্বভাবের উপর সৃষ্টি করেছেন। অপর একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন, ’আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। এখন সে হয় কৃতজ্ঞ হোক, না হয় অকৃতজ্ঞ হোক।’ (সূরা দাহর-৩)