দীর্ঘ তিন মাসের অধিক সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজের মুক্তমঞ্চ মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তির দখলে রয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে কলেজের সহশিক্ষা কার্যক্রম, নষ্ট হচ্ছে ক্যাম্পাসের পরিবেশ।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি দিনের পর দিন অবৈধভাবে মুক্তমঞ্চ ব্যবহার করছে। তিনি সেখানে প্রকাশ্যে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সেবনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট করছে। এছাড়াও মুক্তমঞ্চে প্রতিষ্ঠানের সামাজিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। বিষয়টি কলেজ প্রশাসন জানালেও মুক্তমঞ্চ দখলমুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির নাম রাজু। রাজুর ভাষ্যমতে, তিনি ঢাকা কলেজ কলেজের ১৯৯৮-৯৯ সেশনের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। তার গ্ৰামের বাসা চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা কলেজের ২য় গেট থেকে একটু এগিয়ে ডানপাশে মুক্তমঞ্চ। মুক্তমঞ্চে বিগত দিনে সহশিক্ষামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমের আয়োজন করতেন সামাজিক সংগঠনগুলো। বর্তমানে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির কাছে মুক্তমঞ্চ দখল করে বাসস্থানের জায়গায় পরিণত করায় সংগঠনগুলো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। মুক্তমঞ্চে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিটি খায় ও ঘুমায়। এমনকি এখানেই সে প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য সেবন করে। এতে মঞ্চটি মাদকদ্রব্য সেবনের মঞ্চে পরিণত হয়েছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি রাজু বলেন, ২০২০ সালে নেহাল স্যার আমাকে জেলে দিয়েছিল। জেল থেকে সরাসরি এখানে এসেছি। নেতারা আমাকে যা দেয় তা দিয়ে আমি চলি। আমার প্রতিদিন ৫০০ টাকা খরচ হয়।
ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সায়েম বলেন, ক্যাম্পাসে আসলেই দেখা যায় একটা লোক শুয়ে আছে। কিন্তু, সে কে আমরা কেউ জানি না। এটা খুবই দৃষ্টিকটু বিষয়। আমরা আগে ডিবেটিং সোসাইটি (ডিসিডিএস) এর সেশন বিজয় চত্বর ও মুক্তমঞ্চে করতাম। কারণ, এসব জায়গায় করলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেখতে পারে। এতে তারা এ বিষয়ে আগ্ৰহী হয়। যখন সে মুক্তমঞ্চে বসা শুরু করে তখন থেকেই আর সেখানে আমাদের সেশন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। কলেজ প্রশাসনকে অফিশিয়ালি কখনো জানানো হয়নি। তবে, স্যারদের সাথে কথা হয়েছে। কিন্তু, তারা গুরুত্ব দেয়নি। কলেজ প্রশাসনের তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী জাহেরুল ইসলাম বলেন, সিনিয়রদের থেকে শুনেছি উনি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। হঠাৎ কী কারণে সে অস্বাভাবিক হয়ে গেছে এ বিষয়ে কেউ বলতে পারে না। তিনি মুক্তমঞ্চে থাকে এবং এখানে সে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সেবন করে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে বের করে দেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক পারভীন সুলতানা হায়দার বলেন, বাহিরের কারো কলেজের পরিবেশ নষ্ট করার অধিকার নাই। এ বিষয়টি আজকেই শুনলাম। এর আগে আমাকে কেউ জানায়নি। যারা জানেন তাদের সাথে আলাপ করে দেখি। আগের প্রিন্সিপাল জানেন কিনা ওনার সাথেও কথা হবে। আমি বিষয়টি আরো ভালোভাবে জানি। তারপরে সবার সম্মতিক্রমে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যাতে ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট এবং শিক্ষার্থীদের জন্য হুমকি না হয়।