সমিতি সূত্রে ও সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাহাড়ি এলাকার ফসলি জমিতে বোরো মৌসুমে সেচকাজে পাহাড়ি ঝিড়ির পানি ব্যবহারের লক্ষ্যে রঞ্জনা ঝরণায় একাধিক স্লুইচ গেইট (জল কপাট) নির্মাণ করে সরকার। পরবর্তীতে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন করে ঝরণা সংশ্লিষ্ট কৃষকদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘সমশ্চুড়া রঞ্জনা খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড।’ নিয়মানুযায়ী সবশেষ গত ২০২০ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের মাধ্যমে তিন বছর মেয়াদী কমিটি গঠন করা হয়। নির্বাচিত ওই কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন ওমর ফারুক সাগর ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন রেজাউল করিম। ওই সময় বিগত কমিটি সদস্যদের আয় ও সঞ্চয় বাবদ নগদ ২ লাখ ৩১ হাজার ৯০১ টাকা বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের হাতে বুঝিয়ে দেন।
পরবর্তী এক বছরে (২০২১ সালে) সেচকাজে লাভের পরিবর্তে ২ হাজার ৫শ টাকা লোকসান দেখান সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। ফলে বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) সদস্যদের কাছে বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হলে গন্ডগোল বাঁধে। একপর্যায়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা জামাল উদ্দিনের সহযোগিতায় ৬ সদস্য বিশিষ্ট ‘সেচ কমিটি’ গঠন করে ২০২২ সালে বোরো মৌসুমে সেচকাজ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই সেচ কমিটি মৌসুম শেষে সকল ব্যয় বাদে ৫৩ হাজার টাকা নগদ মুনাফা করেন এবং কৃষকদের কাছে বকেয়া বাবদ মুনাফার আরও ৯৫ হাজার টাকা রয়ে যায়। এদিকে গেল বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর জেলা সমবায় কর্মকর্তা সারোয়ার জাহান সমিতির অডিটকালে হস্তগত নগদ ২ লাখ ৩১ হাজার ৯০১ টাকা সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমের হাতে রয়েছে মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। এমতাবস্থায় ২০২২ সাল অতিক্রম করার পর ২০২৩ সালের ১৪ জানুয়ারি বর্তমান কমিটির দ্বিতীয় বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আহবান করা হয়। বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতি ও অন্যান্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তাসহ সদস্যরা উপস্থিত হলেও অনুপস্থিত থাকেন সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। সমিতি ও সেচ কমিটির সদস্য মোস্তফা কামাল জানান, আমরা যেখানে এক মৌসুম দায়িত্ব পালন করে সব খরচ বাদে প্রায় লাখ টাকা মুনাফা করলাম, সেখানে সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আগের মৌসুমে দায়িত্ব পালন করে মুনাফার পরিবর্তে লোকসান দেখিয়েছেন। মূলত তিনি সমিতির সদস্যদের টাকা আত্মসাত করেছেন।
সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক সাগর জানান, আগের কমিটি নগদ ২ লাখ ৩১ হাজার ৯০১ টাকা সাধারণ সম্পাদক রেজাউলের হাতে হস্তান্তর করে গেছেন। এখনও পর্যন্ত ওই টাকা সমিতিকে বুঝিয়ে দেননি তিনি। বরং এক বছর সেচের দায়িত্ব পালন করে লোকসান দিয়ে ওই টাকাও আত্মসাত করেছেন। এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার দায়িত্বে যখন সেচকাজ চালিয়েছিলাম তখন কাজ করতে হয়েছে বেশি। এছাড়াও কমিটির কতিপয় সদস্য ১৫ একর জমি বিনামূল্যে সেচ দিয়েছেন। মাঠে বকেয়া রয়েছিল প্রায় এক লাখ টাকা। ফলে সে সময় লোকসান হয়েছে। নগদ অর্থ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিগত কমিটি ব্যাংকের হিসাব জমা-খরচের খাতায় না উঠানোয় হিসেবে গড়মিল হয়েছে। পরবর্তীতে হিসেব করে আমার কাছে ৩০-৩৫ হাজার টাকা পাওনা রয়েছিল। যা ইউপি চেয়ারম্যান এর মাধ্যমে মিমাংসা করা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন বলেন, সভাপতি সম্পাদককে নিয়ে বসেছিলাম। তারা কথাও দিয়েছিল, বিষয়টি তারা সমঝোতা করবে। পরে শুনেছি তারা সমঝোতা করতে পারে নাই। এ বিষয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মুহাম্মদ আমির হোসেন বলেন, এবিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে সরেজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।