গোপালগঞ্জে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ ঘিরে গতকাল বুধবারের হামলা-সংঘাতের পর পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত থাকলেও কারফিউর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এই সংঘাতের সময় গুলিতে নিহত চারজনের দাফন ও শেষকৃত্য বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার সম্পন্ন হয়েছে ময়নাতদন্ত ছাড়াই। বৃহস্পতিবার রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।

বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচি ঘিরে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা হামলা চালান। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘাত বাধে। এ সময় গুলিতে নিহত হন চার ব্যক্তি।

সংঘাতে নিহত চার ব্যক্তি হলেন শহরের কোটালীপাড়ার হরিণাহাটি গ্রামের রাজমিস্ত্রি রমজান কাজী, শহরের পূর্ব মিয়াপাড়া এলাকার মোবাইল পার্টস ব্যবসায়ী সোহেল রানা, শহরের উদয়ন রোডের পোশাক ব্যবসায়ী দীপ্ত সাহা ও সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার দোকান কর্মচারী ইমন তালুকদার। চারজনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

নিহত এই চারজনের কারোরই সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত হয়নি। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইমন তালুকদারকে বৃহস্পতিবার সকাল সাতটায় গেটপাড়া পৌর কবরস্থানে, একই সময় সোহেল মোল্লাকে টুঙ্গিপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে, রমজানকে বুধবার রাতে এশার নামাজের পর গেটপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। পোশাক ব্যবসায়ী দীপ্ত সাহাকে বুধবার রাতে পৌর শ্মশানে সৎকার করা হয়।

গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জীবিতেষ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, চারজনের মৃতদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ময়নাতদন্ত করা হয়নি। এ ছাড়া অনেকেই আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছেন।

পুলিশও নিহত ব্যক্তিদের সুরতহাল করেনি। হাসপাতাল থেকে মৃত্যুসনদ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে।

নিহত চারজনের ময়নাতদন্ত না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক সাংবাদিকদের বলেন, এখন পর্যন্ত ২৫ জনের অধিক আটক হয়েছেন। ময়নাতদন্ত কেন করা হয়নি, জানতে চাইলে তিনি সরাসরি এর জবাব দেননি। বলেছেন, ‘বিষয়টি আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসব। এ ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।’

গোপালগঞ্জ জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা নিহত চারজনের মরদেহ পোস্টমর্টেম (ময়নাতদন্ত) করতে না দিয়ে জেলা হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক নিয়ে যায়।’ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমকে এ প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

তবে নিহত রমজানের মামা কলিম মুন্সি প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘ভিডিওতে দেখলাম, আমার ভাগনেকে গুলি করে মেরেছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, কিন্তু বাবাটাকে বাঁচানো গেল না। হাসপাতাল থেকে থানায় নিয়ে গেলে থানার গেট বন্ধ পাই। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ আবার হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। কিন্তু হাসপাতালের লোকেরা বলল, “আপনারা এখন বাসায় নিয়ে যান। এখানে সমস্যা হতে পারে।” লাশ ময়নাতদন্ত করাতে পারলাম না।’

নিহত সোহেল মোল্লার মামা জাহিদুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) বিকেলে মোবাইলে জানতে পারি, আমার ভাগনে সোহেল গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। আমি আসতে আসতে হাসপাতাল থেকে লাশ বাড়ি নিয়ে আসছে। তবে লাশের কোনো ময়নাতদন্ত করা হয় নাই বা ডেথ সার্টিফিকেট হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয় নাই।’