নোয়াখালী জেলায় আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে এই দাবি জানান তিনি।

নোয়াখালী বিভাগ ও বিমানবন্দর বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রায় ১কোটি মানুষ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে প্রায় ৪ যুগ ধরে , এর পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রেমিট্যান্স খাতে অপরিসীম ভূমিকা রাখা বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রায় ১০ লক্ষাধিক প্রবাসীও একই দাবিতে দেশের বাইরে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন, সভা ও সেমিনার করেছেন। অবশেষে সমগ্র নোয়াখালীবাসীর দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থণ জানিয়ে এবার বেসামরিক বিমান সচিবকে নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে চিঠি দিয়েছেন নোয়াখালী জেলা প্রশাসক ।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) এক চিঠিতে নোয়াখালী জেলায় একটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইসহ প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ।

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদের সই করা চিঠিতে বলা হয়, নোয়াখালী এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী নিয়মিতভাবে বিদেশে যাতায়াত করে থাকেন। নোয়াখালী জেলায় একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের জন্য স্থানীয় জনগণ বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশ করে জোর দাবি জানিয়েছেন। তাছাড়া পর্যটন সম্ভাবনাময় নোয়াখালী জেলার হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপে বিদেশি পর্যটক আসতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও আন্তর্জাতিকভাবে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক পর্যটক এখানে আসতে পারছেন না।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বিমানবন্দর না থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন শিল্প, সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। মিয়ানমারের প্রায় ৩৮ হাজার নাগরিককে ভাসানচরে স্থানান্তর করায় ভিভিআইপি, বিভিন্ন দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিদেশি দাতা সংস্থার প্রধানরা প্রায় নোয়াখালীতে আসেন। ফলে বিমানে যাতায়াতের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সবদিক বিবেচনায় নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর স্থাপনের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরা হয় চিঠিতে।

এদিকে, নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসকের দেওয়া চিঠির খবর দেশ, বিদেশে ছড়িয়ে পড়লে প্রস্তাবিত বিমানবন্দর দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসীসহ নোয়াখালীর বিভিন্ন রাজনৈতিকমহল,সামাজিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক সমাজ, আইনজীবী, ডাক্তার, শিক্ষকসহ সর্বস্তরের জনগন।

নোয়াখালী বিভাগ ও বিমানবন্দর বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের আহব্বায়ক সাংবাদিক সাইফুর রহমান রাসেল বলেন, বাংলাদেশের ধনী জেলা নোয়াখালী এবং এই জেলাটি প্রাকৃতিক ধনসম্পদেও সমৃদ্ধ। অপরদিকে প্রতিনিয়তই জেলাটির দক্ষিণ পাশে সাগরের দিকে ভূখণ্ড বেড়েই চলেছে, সরকার চাইলে অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ যেকোনো ধরনের বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নোয়াখালীকে বেচে নিতে পারবে। এ অবস্থায় বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রায় এক কোটি মানুষের প্রাণের দাবি নোয়াখালী বিমানবন্দর নির্মাণ অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত এবং অর্থনৈতিকভাবে টেকসই ও লাভজনক হবে বলে এই অঞ্চলের সুধি ও বিজ্ঞ জন মনে করেন।
সম্প্রতি নোয়াখালী বিভাগ ও বিমানবন্দর বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ বৈঠকে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে আমরা অনুরোধ করেছিলাম বিমানমন্ত্রনালয়কে ওনার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি লিখতে। তিনি আন্তরিকভাবেই তা করেছেন । আশা করছি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের আন্তরিকতায় খুব শীঘ্রই নোয়াখালীতে বিমানবন্দর নির্মানের কার্যক্রম শুরু হবে।

ইতালি বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি বর্ষীয়ন প্রবাসী নেতা লকিয়ত উল্যাহ জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন , আমাদের নোয়াখালীবাসীর বহু বছরের প্রাণের দাবি এই জেলায় একটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর স্থাপন। কারন এই জেলার রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের টাকায় দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রয়েছে।  তাই আমি সকল প্রবাসীদের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকায় আমাদের জেলায় একটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর নির্মানের জোর দাবি জানাচ্ছি। 

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নোয়াখালীতে বিমানবন্দর স্থাপনের যৌক্তিকতা উল্লেখ করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব বরাবর চিঠি প্রেরণ করেছি। বিষয়টি নোয়াখালীবাসীর প্রাণের দাবি। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে বহুমাত্রিক উপকার আসবে। আশাকরি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো বিবেচনা করবে।

নোয়াখালীতে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর স্থাপন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীর এক কোটির বেশি মানুষ বিমানে চলাচলের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক খাত হবে যেমন উন্নত তেমনি রাষ্ট্রের রাজস্বকে নিয়ে যাবে অনন্য উচ্চতায় এমনটাই মনে করে নোয়াখালীর সুশীল সমাজ।