অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবার পুর্বে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জুতা দিয়ে পিটিয়েছে সামসাদ রানু (রাঙ্গাভাবি)। তার সন্তান রোদ্রের ভেতরে দাড়িয়ে থাকায় অভিভাবক হিসাবে জুতা পেটা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। গতকাল বুধবার সকাল ১০ টায় আলমডাঙ্গা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবার পুর্বে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জুতা দিয়ে পিটিয়েছে সামসাদ রানু (রাঙ্গাভাবি)। তার সন্তান রোদ্রের  ভেতরে  দাড়িয়ে থাকায় অভিভাবক হিসাবে জুতা পেটা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে সুশীল সমাজের লোক মনে করেন একজন প্রধান শিক্ষক একটা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক। আসলে জুতার বাড়ি দেওয়াতে আলমডাঙ্গাবাসি মজা পেয়েছি কি জানিনা, কিন্তু রাগাভাঙ্গা ভাবি ঠিকই মজা পেয়েছে। রাঙ্গাভাবি শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয় বিভিন্ন সময়ে মাননীয় সংসদ সদস্য, এবং আলমডাঙ্গাতে চার বারের মেয়রকে নিয়েও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কু রুচিকর মন্তব্য করায় মাঝে মাঝে  আলোচনায় আসে ।

আলমডাঙ্গা পাইলট হাই স্কুলের পূর্বের ছাত্ররা যারা আজ বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত আছে, সেই সব ছাত্রের নিশ্চয়ই হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হচ্ছে কথাটি শোনার পর।প্রধান শিক্ষকের জুতার বারি দেওয়ার পরেও আলমডাঙ্গাবাসি, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক বৃন্দ ও সকল স্কুল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা যদি এর বিচার না চায় তাহলে একথা মানতে হবে আলমডাঙ্গাতে নৈতিকতার অধঃপতন ঘটেছে। সুষ্ঠু বিচার না হলে আলমডাঙ্গাতে রচিত হবে কলঙ্কময় অধ্যায়।একটা শিক্ষক একদিকে যেমন ছাত্রদের বিদ্যা শিখাচ্ছেন অন্যদিকে তার প্রতিদান হিসেবে খেতে হচ্ছে জুতার বাড়ি। 

যে শিক্ষককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল জ্ঞানভান্ডার, যাকে ঘিরে রচিত কত  গদ্য,কবিতা,সেই মানুষটার বুকে আজ বয়ছে বেদনার হাহাকার।নিথর দেহ নিয়ে নানা অপবাদ মাথায়  নিয়ে চাকুরী জীবনের শেষ প্রান্তে জুতার বাড়ি খেতে  হলো প্রধান শিক্ষককে, যা এর পূর্বে আলমডাঙ্গা ঘটেনি। রাস্তায় পড়ে থাকা  বইয়ের পৃষ্ঠা একটা সময় মূল্যবান হলেও সময় প্রয়োজনে সেটিও মূল্যহীন হয়ে পড়ে । যে শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর । শিক্ষক জাতির কর্ণধর।আর সেই জাতির মুখে একজন মহিলা নেত্রি হিসাবে যখন এমন জুতার বারি দেয় তখন মানবতা কোথায় দাড়ায় । দুঃখ নিয়ে ভারাক্রান্ত মনে একটা জিনিস ভেবেই মনকে শক্ত করতে হবে মহত্ত্ব নিয়ে অনাসক্ত হয়ে ব্যক্তিসত্তার স্বকীয়তা ভূলতে হবে, লুপ্ত করতে হবে নিজেকে, বিলিয়ে দিতে হবে জাতির সহায়তায়।

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামের  সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, সামসাদ রানু যেমন একটি ছাত্রের অভিভাবক আমি স্কুলের সকল ছাত্রের অভিভাবক। আমার স্কুলের সন্তানেরা কষ্ট করছে বা  কিভাবে ক্লাস গ্রহণ করতে হয় সেটি আমি পূর্বে করে এসেছি  এবং আমার স্কুলের ছাত্রদের ভালো-মন্দ দেখভাল করার যথেষ্ট  অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর সকল ছাত্র এক জায়গায় ছিল আমার কাছে সকল ছাত্রই সমান তার সন্তানকে আলাদা করে রাখতে হবে এটা একজন প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি কখনো করতে পারবো না। আর তিনি যে অভিযোগ করছে রোদের ভেতর ছাত্রদের দাঁড়িয়ে রাখার কিন্তু ঘটনাটি যখন ঘটে তখন ৯:৩০-৯:৪৫ মিনিট এই সময়ে। বিধায় এই সময়ে রোদে পোড়ানোর কোন কথাই ওঠেনা।

আমি মনে করি তিনি শুধু আমার গালে জুতা মারেননি সকল শিক্ষক জাতির মুখে জুতাপেটা করেছে।আর স্কুল প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার কথা যদি শিক্ষকরাই না জানে  তাহলে ছাত্ররা কেন পরীক্ষা দিতে আসলো।  এবং ইস্কুলের পরীক্ষা যে রুটিন টা ছাপা হয়েছে  সকল ছাত্ররা জানলো অথচ স্কুলের শিক্ষকরা জানলো না এটা কেমন কথা। আসলেই কারো ইন্ধনে এমন করলো কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত ।  আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে এর পূর্বেও অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। এ বিষয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সাথে সাথেই জানিয়েছি এবং ডিউটিরত অবস্থা একজন সরকারি  প্রধান শিক্ষকে জুতা পেটা করার জন্য আমি আলমডাঙ্গা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছি। 

গ্রেফতারের আগে সামসাদ রানুর সাথে কথা বলা হলে তিনি  জানিয়েছেন আমি স্কুলে যেয়ে দেখছি রৌদ্রের ভেতরে ছাত্র দাঁড়িয়ে আছে এবং স্কুলের শিক্ষক সিদ্দিক মাস্টারকে জিজ্ঞাসা করি আজকে কি ছাত্ররা কেন দাঁড়িয়ে আছে তখন তিনি জবাব দেন প্রধান শিক্ষক একটি শয়তান  আজকে পরীক্ষা কিন্তু আমরা কোন কিছুই জানিনা ছাত্ররাও জানেনা এবং এই রোদের ভেতরে তাদের দাঁড়িয়ে রেখেছেন। এমন কতিপয় কিছু শিক্ষকের কথা শুনে আমি তাকে ধাক্কা দেই।  তবে সামসাদ রানু বলেন  প্রধান  শিক্ষক যদি আমার নামে কোন অভিযোগ করে বা মামলা করে আমিও শিক্ষকের নামে পাল্টা মামলা করব। এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ওসি জনাব বিপ্লব কুমার নাথ বলেন প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের ভিত্তিতে  আজ রাত ৮ টার সময় আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।