পৌরসভা প্রাঙ্গন থেকে রড লোপাট, রেজিস্ট্রি অফিস প্রাঙ্গণের সেগুন গাছ আত্মসাৎ, উপজেলা কমপ্লেক্সের পুকুর দখল, ওয়াপদা কমপ্লেক্সের ভবন (যুবলীগের অবৈধ অফিস) দখল, টেন্ডার সিন্ডিকেট, ফুটপাতে দোকান বাণিজ্য, সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান, সালিশ বাণিজ্যসহ যাবতীয় অপকর্মে জুড়ীহীন আব্দুল খালেক পাটওয়ারী এবার ফরিদগঞ্জ সরকারী কলেজের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক রাধেশ্যাম কুরীর বাসা দখলের উদ্দেশ্যে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।

তার এ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক সমাজ এবং সাধারণ মানুষ ছাড়াও খোদ বিনএনপির নেতাকর্মীদের মাঝেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। আব্দুল খালেক পাটওয়ারী উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহবায়ক।
ঘটনার বিবরনে জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ সরকারী কলেজের সদ্য সাবেক সহকারী অধ্যাপক রাধেশ্যাম কুরী দীর্ঘদিন যাবৎ ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ওয়াপদা কলোনির ভাড়াকৃত একটি ফ্লাটে বসবাস করে আসছেন। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সকালে বাসাটি দখলের উদ্দেশ্যে তাঁকে জোরপূর্বক বাসা থেকে বের করে দিয়ে সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেন আব্দুল খালেক পাটওয়ারী ও তার লোকজন। এ নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক ও তার পরিবারের সদস্যদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ঘটনার অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, অভিযুক্ত আব্দুল খালেক পাটওয়ারী স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার থেকে নানান সুযোগ সুবিধা নেওয়ার কৌশল হিসেবে স্বেচ্ছায় বিএনপির সকল পদ থেকে পদত্যাগ করে ছিলেন। ১৭ জানুয়ারী ২০১৯ সালে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দলের সকল দায়িত্ব এবং সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তখন স্থানীয়, জাতীয় ও অনলাইন গণমাধ্যমে তার অব্যাহতির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে প্রকাশ হয়েছিল। এক সময়ে বিএনপিতে থাকা আব্দুল খালেক পাটওয়ারী অব্যাহতি নেয়ার পর থেকে ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের সাথে মিলে মিশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, লুটপাটের কৌশল রপ্ত করে নেয়।
ছাত্রজনতার গণঅভ্যুথানের মধ্যে গত ৫ আগস্ট ২০২৪ খ্রি. শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে আব্দুল খালেক পাটওয়ারীর এক সময়ের শুভাকাঙ্খি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান শাহীনের দলীয় কার্যালয়ে দখলের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের উত্থান ঘটে।
নিজেকে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক দাবিদার আব্দুল খালেক পাটওয়ারীর দখলে থাকা যুবলীগের সাবেক কার্যালয়টিতে প্রকাশ্যে দিবালোকে বিভিন্ন নারীদের দিবারাত্রিতে অবাধে যাতায়াত দৃশ্যমান হওয়ায় সমাজে সচেতন নাগরিকদের মনে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে স্বেচ্ছায় দল থেকে অব্যাহতি নেয়া আব্দুল খালেক পাটওয়ারী কিভাবে দলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যায়গা করে নিয়েছেন? এমন প্রশ্নে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে। সম্প্রতী আব্দুল খালেক পাটওয়ারীর বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করার চেষ্টা করলে প্রকাশ্যে উপজেলা পরিষদ এলাকায় সাংবাদিকদের প্রাণনাশের হুমকি-ধমকিসহ লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটেছে।
উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহবায়ক পরিচয়ের কল্যাণে আব্দুল খালেক পাটওয়ারী প্রকাশ্যে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ফরিদগঞ্জ সাবরেজিষ্ট্রার কার্যালয়ের মালিকানাধীন লাখ টাকা মূল্যের সরকারি কয়েকটি বিশাল আকারের সেগুন গাছ কেটে নিয়ে যায়। এতে ক্ষ্যান্ত হয়নি বিএনপি মানসম্মান নষ্টকারী লোভী আব্দুল খালেক পাটওয়ারী। খোদ উপজেলা পরিষদের সামনের পুকুরটিও সম্প্রতি নিজের দখলে নিয়েছেন তিনি। যা ওপেন সিক্রেট।  
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাফি আহমেদ, রবিউল জেডিসিসহ আরো অনেকেই আব্দুল খালেকের কৃতকর্মের কথা তুলে ধরে দলীয় এবং প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সুদৃষ্টি কামনা করে তার বিচার দাবী করেছেন।
আব্দুল খালেক পাটওয়ারীর রোষানলের শিকার প্রভাষক রাধেশ্যাম কুরী জানান, আমার বাসায় দখলের উদ্দেশ্যে তালা মেরে দেয়। পরবর্তিতে বিএনপির স্থানীয় এক নেতাকে জানালে আমাকে বাসার চাবি ফিরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় আমার পরিবারসহ এখনো আতঙ্কে আছি।
এ বিষয়ে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন ফরিদগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহ মো. মাসুম বিল্লাহ।
এদিকে আব্দুল খালেক পাটওয়ারীর কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতাকর্মীরা অনুতপ্ত হয়ে তারা বলেন, যেহেতু দলের হাইকমাণ্ড রয়েছে। তার বিষয়ে তারাই সিন্ধান্ত নিবে। কারো ব্যক্তিগত অপরাধের দায় বিএনপি দল নিতে পারেনা।
এদিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক  আলহাজ¦ এমএ হান্নান বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপ্রতি জিয়াউর রহমানের গড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিতে কোন  সন্ত্রাস, চাঁদাবাজের স্থান নেই। যা তিনি প্রকাশ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলে থাকেন।