অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে দেশের
সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে। জলবদ্ধতায় বেনাপোল স্থলবন্দরে অনেক স্থানে পানি জমায়
মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে
অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ইতোমধ্যে পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশের কয়েকটি গেট বন্ধ করেছে
বন্দর কর্তৃপক্ষ। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানিতে
কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নেই বন্দর কর্তৃপক্ষের। এদিকে বন্দরে পড়ে থাকা
কেমিক্যাল মিশ্রিত পানিতে দিন দিন স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে শ্রমিকদের।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে রেল কর্তৃপক্ষ বন্দরের পাশ দিয়ে নতুন রেল রাস্তা নির্মান করতে
কালভার্ট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যে কারণে বৃষ্টির
পানিতে বন্দর জুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
বন্দর ও বন্দর ব্যবহারকারী সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল বন্দরের চেসিস টার্মিনাল। যেখানে
পণ্যবাহী ট্রাক ও চ্যাসিস পার্কিং ও আমদানি পণ্য খালাস করা হয়ে থাকে। বেনাপোল
বন্দরে বছরে ২২ থেকে ২৪ লাখ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয় ভারত থেকে।
এসব পণ্য রক্ষণাবেক্ষণে বন্দরে ৩৩টি শেড ও ৩টি ওপেন ইয়ার্ড ও একটি ট্রান্সশিপমেন্ট
ইয়ার্ড আছে। আকারে ছোট পণ্যগুলো রাখা হয় শেডের এবং বড় আকারের পণ্য রাখা হয়
ওপেন ইয়ার্ডে। তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা
নিয়ে তৈরি হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় বৃষ্টিপাত বেশি
হলে পানি নিষ্কাশনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়ার্ডে জলবদ্ধতা তৈরি হয়। এতে পানিতে ভিজে
যেমন পণ্যের গুণগতমান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটে। বিভিন্ন সময় এ অবস্থা
থেকে উত্তরণে ব্যবসায়ীরা বন্দরের স্মরণাপন্ন হলেও গুরুত্ব নেই তাদের। এদিকে বন্দরে
অগ্নিকাণ্ডে কেমিকেল বজ্র বন্দর অভ্যন্তরে বছরের পর বছর ফেলে রেখায় বৃষ্টির পানিতে
চুলকানিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বন্দর ব্যবহারকারীরা।
বেনাপোল বন্দরের শ্রমিক নেতা মাকসুদুর রহমান রিন্টু জানান, প্রতিদিন পানির মধ্য
দিয়ে কাজ করতে গিয়ে চুলকানি ও নানা অসুস্থতায় পড়তে হচ্ছে শ্রমিকদের। বন্দরের
সড়কের উচ্চতার চেয়ে গুদামগুলো নিচ হওয়ায় পানির স্বাভাবিক নিষ্কাশন সম্ভব হয় না।
ফলে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে এবং চলাফেরায় ভোগান্তি বাড়ছে। বন্দওে সম্প্রতি ঘটে
যাওয়া অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কেমিকেল সামগ্রী এখনো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে
রয়েছে। যা বৃষ্টির পানিতে মিশে শ্রমিকরা চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জামান সনি জানান, একটু
ভারি বৃষ্টিপাত হলেই বন্দর এলাকার বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ফলে পণ্যবোঝাই
ট্রাক চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং নিরাপত্তা কর্মীদের চলাফেরাও দুরূহ হয়ে পড়ে।
বেনাপোল বন্দরের ব্যবসায়ী বকুল মাহবুব বলেন, বন্দরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায়
চলাচলে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। কয়েকটি পণ্যাগারে পানি ঢুকে অনেক
আমদানিকারকের লাখ লাখ টাকার মালামাল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। বন্দরের ভাড়া
প্রতিবছর বাড়লেও তারা বন্দরের উন্নয়নে কোন ভূমিকা নিচ্ছে না। অধিকাংশ
অবকাঠামোয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া তৈরি হওয়ায় বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা তৈরি
হচ্ছে।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক আনু জানান,
অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর হলো বেনাপোল। সরকার এই বন্দর থেকে বছরে প্রায় ১০ হাজার
কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা একাধিকবার বন্দরের কাছে
অভিযোগ করলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। এত বড় বাণিজ্যিক
স্থাপনায় বছরের পর বছর এই দুর্দশা চললেও সরকার কোন পদক্ষেপ না নেওয়া দুর্ভাগ্যজনক।
বৃষ্টির পানি পণ্যাগারে ঢুকে মালামাল ভিজে নষ্ট হলে লোকসানের শিকার হতে হয়
ব্যবসায়ীদের।
বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক মো. শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধাতা প্রতিবছর
বৃষ্টির সময় তৈরি হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার
সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। পানি নিষ্কাশনের
সহযোগিতা চেয়েছি বেনাপোল পৌরসভার কাছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে
তুলতে পার্শ্ববর্তী হাওড়ে সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।