কক্সবাজার শহরের উত্তর কুতুবদিয়া পাড়া এলাকার সাগর পাড় থেকে অনুমান ৫০ মিটার দূরে পানিতে ভাসমান টলারে মৃতদেহ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন।পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে ১০জনের অর্ধগলি লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। গত (২৩এপ্রিল) সকাল আনুমানিক ১০টার সময় এ ঘটনাটি ঘটে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, ঘটনায় মৃত শামসুল আলম এর স্ত্রী রোকিয়া আক্তার কর্তৃক ০৪ জন এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে আসামী করে। ঘটনায় দুই জনের সংক্ষিপ্ততা পেলে তাদের গ্রেফতার করে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। এ ব্যাপারে আজ আনুমানিক বিকেল ৫টা ৩০মিনিটের সময় কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারের কর্যলয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির আয়োজন করা হয়।
এসময় কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম পিপি এম(বার) বলেন,গত (২৩এপ্রিল) অনুমান সকাল ১০টা ৩০মিনিটের সময় কক্সবাজার সদর মডেল থানাধীন ১ ওয়ার্ডস্থ উত্তর কুতুবদিয়া পাড়া সাগর পাড় থেকে অনুমান ৫০ মিটার দূরে পানিতে ভাসমান টলারে মৃতদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সংবাদ দিলে,কক্সবাজার সদর মডেল থানা হতে অফিসার ইনচার্জসহ পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও পুলিশ ট্রলার হতে মরদেহ গুলো বের করতে সমর্থ না হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসকে অবহিত করা হয়। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে পুলিশ সুপার, কক্সবাজারসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত হন। ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসলে স্থানীয় লোকজন এবং ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় ভাসমান ট্রলার থেকে পেরেক দিয়ে আটকানো মাছ রাখার কেবিনের ভিতর থেকে পুলিশ ১০ টি অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।
যার কোন কোনটির হাত-পা রশি ও জ্বাল দিয়ে বাঁধা ছিল। উদ্ধারকৃত মরদেহগুলোর সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত পূর্বক কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করণের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে মাননীয় আইজিপি মহোদয় এর নির্দেশক্রমে ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ, অতিরিক্ত ডিআইজি চট্টগ্রাম রেঞ্জ, ডিআইজি পিবিআই, ডিআইজি সিআইডি এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ কক্সবাজাররে আগমন করেন এবং সম্মিলিতভাবে এই ধরণের চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের সুষ্ঠু তদন্তে নির্দেশনা প্রদান করেন। উদ্ধারকৃত লাশগুলোর পরিচয় শনাক্তে প্রথাগত পদ্ধতি ব্যবহার করে পুলিশ ০৬ (ছয়) টি মৃতদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং লাশের দারিদার স্বজনদের কাছে লাশগুলো হস্তান্তর করে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবশিষ্ট ০৪ টি লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য লাশগুলো কক্সবাজার সদর হাসাপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে এবং এর জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তা ইতোমধ্যেই ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনার পর হতে পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের পাশাপাশি জেলা পুলিশের ০৫ টি বিশেষ চৌকস টিম প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতারের লক্ষ্য অভিযান শুরু করে।
এই ঘটনায় মৃত শামসুল আলম এর স্ত্রী রোকিয়া আক্তার কর্তৃক ০৪ জন এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে আসামী করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দায়েরকৃত এজাহারের ভিত্তিতে কক্সবাজার সদর মডেল থানার মামলা নং-৪৫, তারিখ-২৫/০৪/২০২৩খ্রি. ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়। লাশ প্রাপ্তির পর হতে টানা ৪৮ ঘন্টা অভিযান করে ম্যানুয়েল। সোর্স ও গণমাধ্যম হতে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাইট্টা কামাল (৪৫) ও করিম সিকদার(৫৫)'কে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় যারা দায়েরকৃত মামলার এজাহার নামীয় ১নং ও ৪নং আসামী। গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন এবং এর সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে জেলা পুলিশ কক্সবাজার এর অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে।