খাল-বিল ও জলাশয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে পানি। নতুন পানি পেয়ে মাছের ঝাঁকের বিচরণ শুরু হয়েছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় বেড়েছে মাছ ধরার ফাঁদ বিক্রি।
স্থানীয় কারিগররা দেশীয় বাঁশ দিয়ে তৈরি করছেন মাছ ধরার নানান রকম ফাঁদ। নারীরা অবসরে ঘরে বসে এসব উপকরণ তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন। অন্যদিকে পেশাদার ও মৌসুমী জেলের পাশাপাশি অনেকে এসব ফাঁদ দিয়ে মাছ ধরে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজার বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছেন।
মাছ ধরার এসব দেশীয় উপকরণকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। ঝাঁকি জাল, টানা জাল, ঠেলা জাল, পলো, পেতে রাখা জাল, বাইড়, ফসকা ও বড়শি।
সাধারণত ফাঁদে ধরা পড়ে দারকে, পুঁটি, চান্দা, টাকি, খলিসা, ট্যাংরা, কই, বাইম মাছ ও রুই, কারফু, ছোট কাতল, শোল মাছসহ বিভিন্ন মাঝারি এবং বড় প্রজাতির মাছ।
সপ্তাহে দুই দিন (শনি ও মঙ্গলবার) উপজেলার হাট ঘুরে দেখা গেছে- মাছ ধরার বিভিন্ন ফাঁদ নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। পেশাদার ও শৌখিন মাছ শিকারিদের আনাগোনায় জমে উঠেছে হাট-বাজার। আকার ও প্রকারভেদে ১০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন মাছ ধরার উপকরণ বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের নলেয়া গ্রামের পাইকারি বিক্রেতা সুরুজ্জামান বলেন, আমি আমার পরিবার সহযোগিতায় মাছ ধরার নানান রকম ফাঁদ ও মাছ রাখার খলুই তৈরি করি। এসব ফাঁদ পাইকারি বিক্রির পাশা-পাশি খুচরাও বিক্রি করি। এতে আমার হাট প্রতি ১ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে।
ভুরুঙ্গামারী হাটের মাছ ধরার ফাঁদ বিক্রেতা সাইদুল ইসলাম ও জালাল উদ্দিন বলেন, বর্ষা মৌসুমে খাল-বিলে পানি বাড়লে আমাদের বিক্রিও বেড়ে যায়। শনি-মঙ্গলবারের হাটে ১ থেকে ৫ হাজার টাকার সরঞ্জামাদি বিক্রি করতে পারি। ফলে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা লাভ হয়।
ফাঁদ কিনতে আসা মইদাম ভুষির ভিটা এলাকার তফের আলী বলেন, আমাদের বাড়ির পাশের বিল, আবাদি জমি ও ছোট ছোট ডোবা-নালায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। আর সেখানে দেখা মিলছে বিভিন্ন জাতের দেশি মাছ। আমি বর্ষাকাল শুরু হলেই মাছ ধরি, এটা আমার নেশা। তাই মাছ ধরার জন্য বাইড় কিনতে এসেছি।
পলো ও জাল কিনতে আসা উপজেলার সোনাহাট ঘুন্টিঘর এলাকার মতিয়ার রহমান বলেন, বৃষ্টির সিজনে পানি বাড়লে বিল থেকে নিজ হাতে মাছ শিকার করি। এতে বাজার থেকে মাছ কিনতে হয় না। এ মাছের যেমন পুষ্টি তেমনি ঢেকুর তোলা স্বাদ।
তবে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, অবৈধ জাল ও বাঁশের তৈরি কিছু ফাদ ব্যবহারের কারণে দেশীয় মাছের বংশ বিস্তার অনেকটাই কমে এসেছে। এটি এখনই বন্ধ করা না গেলে এ অঞ্চলে এক সময় দেশীয় মাছের বিলুপ্তি ঘটবে।
তারা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি উদ্দ্যোগে মাছ ধরার টেকসই উপকরণ যা মাছের ছোট পোনাকে বেরিয়ে যেতে দেয় এবং মাছের বংশ বিস্তারে সহায়ক হয় এমন সরঞ্জাম ব্যবহারে মৎস্যজীবী সহ সাধরণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।