রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়িতে মসজিদের নাম ভাঙ্গিয়ে দোকান উচ্ছেদ ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে শঠিবাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সভাপতি ও আওয়ামীলীগ নেতা রবিউল পরামানিকের বিরুদ্ধে।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়িতে মসজিদের নাম ভাঙ্গিয়ে দোকান উচ্ছেদ ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে শঠিবাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সভাপতি ও আওয়ামীলীগ নেতা রবিউল পরামানিকের বিরুদ্ধে।এবিষয়ে ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ি হাটে গত শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার সময় মসজিদ কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল পরামানিক অজ্ঞাত ১৫/১৬ জনকে নিয়ে লাঠি,লোহার রড, ছোরা, ইট, বালু, সিমেন্ট নিয়ে সজ্জিত হয়ে মসজিদ সংলগ্ন আকমল হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে প্রবেশ করে উচ্ছেদ ও বে-দখলের উদ্দেশ্যে দোকান ঘরের পূর্ব পাশে রাজমিস্ত্রীকে দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ কাজ করতে থাকে। এসময় কাজে বাঁধা দিতে গেলে আকমল হোসেনকে লাঠি-শোঠা ও লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করলে পিতাকে বাঁচাতে ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন এগিয়ে এলে তাকেও মারপিট করে আহত করে। এবিষয়ে ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন জানান, আমরা সরকারি খাস জমিতে দীর্ঘ ৬০ বছর যাবৎ বংশ পরম্পরায় ব্যবসা করে আসছি। এতদিন কোন সমস্যা হলো না, মসজিদের নতুন কমিটি এসেই এই সমস্যা শুরু করে দিছে। বিষয়টি স্হানীয়ভাবে শালিস- বৈঠকের আয়োজন করলেও আজ পর্যন্ত কোন সুরহা আসে নাই। এবিষয়ে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা এনামুল হক নিজেও সমাধানের চেষ্টা করেছেন। আমরা নিয়ম মাফিক হাটের ইজারার টাকা, টোল, সরকারী খাজনা সব কিছু দিয়ে ব্যবসা করে আসছি। মসজিদ কমিটির লোকেরা সরকারি লোকদেরকে ভুলভাল বুঝিয়ে কী যেন একটা নোটিশ নিয়ে এসে আমাদের দোকান পাট ভেঙে দেয় এবং আমাদের দোকান গুলোকে অবৈধ ঘোষণা করে। অপর ভুক্তভোগী আহিনুল ইসলাম বাবু জানায়, শঠিবাড়ি হাটের মোট ৩.৫০ একর সম্পতিই সম্পূর্ণ সরকারী খাস জমি। যদি আমাদের দোকান গুলো অবৈধ হয় তাহলে ৩.৫০ একরের ভিতরে যতো দোকানপাট আছে সব অবৈধ হবে। শুধু আমাদের দোকান গুলো কেমনে হয়? আর শঠিবাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের নিজস্ব জায়গা হলো ৩ শতক। ৩ শতক বাদেও অনেক জায়গা জুড়ে মসজিদ ঘর নির্মাণ হয়েছে, তাতে আমাদের কোন দুঃখ নাই। আমরাও মুসলিম হিসেবে চাই মসজিদ চাকচিক্যময় হোক, উন্নয়ন হউক। মসজিদকে ব্যবহার করে আমাদের রিজিকের উপর হাত দিচ্ছে কেন? ইসলাম ধর্ম কী এমনটা চায়? আমরা এটার সুষ্ঠু সমাধান চাই। ব্যবসায় আমাদের একমাত্র সম্বল। এটা নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের পরিবারকে নিয়ে পথে বসতে হবে। আমাদের পুনর্বাসন করা হোক নাহয় এখানেই ব্যবসা করতে দেয়া হোক। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রংপুর জেলা সেক্রেটারি মাওলানা এনামুল হক জানান, আমি এবিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। সমাধানের কথা বললে মসজিদ কমিটি কোন গুরুত্ব দেয় না, কারো কথাই শোনে না। মসজিদ কমিটি যেটা করতেছে এটা ঠিক না। শঠিবাড়ি গালামাল সমিতির সেক্রেটারি ও শঠিবাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের কোষাধ্যক্ষ আশরাফ আলী জানান, এখন থাকি বছর তিনেক আগে পুরাতন মসজিদের ফাটল এর কারণে এবং মসজিদ পুনঃনির্মাণ করার জন্য আশেপাশের ১৪ টি দোকানের নামে নোটিশ আসে। মসজিদ ভেঙে পুনঃনির্মাণ করার সময় যাতে করে কোন প্রকার দূর্ঘটনা না ঘটে।সে লক্ষ্যে মসজিদ পুনঃ নির্মাণ কাজ শেষ হলে পুনরায় যে যার পজেশন নিয়ে আগের মতো ব্যবসা করতে পারবে বলে তখন জানিয়েছিলেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এবিষয়ে অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতা ও মসজিদ কমিটির সভাপতি রবিউল পরামানিক জানান, এটি আগের কমিটির সিদ্ধান্ত। আমি কোন মারপিট করিনি।ওদের দোকান স্কেভেটার দিয়ে প্রশাসন ভেঙ্গে দিয়েছে কোর্টের আদেশ অনুযায়ী।আমাদের কমিটির লোকজনের বিরুদ্ধে যে, অভিযোগ দিয়েছে, এ বিষয়ে, ইউএনও ও ওসি মহোদয়ের কাছে আমাদের লোক জন গিয়েছে, এটা নিয়ে বসবে।জায়গা দখল ও দোকান উচ্ছেদ করার তো আমরা কেউ না। এটা সম্পন্ন সরকারী খাস জমি।আগের কমিটি যে ভাবে করে গেছে, আমরা সে ভাবেই করতেছি। আগের কমিটি মসজিদ পূর্ণ নির্মাণ করজর জন্য মসজিদের সামনে দোকান ঘর গুলো থাকার কারনে খুব ডিস্টব হয়। অবৈধ ভাবে আছে, তাদেরকে উচ্ছেদ করলে মসজিদের জন্য ভালো হয়। মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দীক জানান, খাস জমিতে মসজিদের ওয়াল নির্মাণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডার কথা শুনেছি। এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।